ঢাকাSunday , 15 March 2020
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কুড়িগ্রামের বিতর্কিত ডিসি’র অপকর্মের প্রধান সিপাহশালা মনিরামপুরের নাজিম

Tito
March 15, 2020 3:23 pm
Link Copied!

  • বিশেষ প্রতিনিধি।।
    মনিরামপুরের সন্তান কুড়িগ্রামের এডিসি নাজিম উদ্দিন আরো একটা কলঙ্কযুক্ত করলেন নিজের সার্ভিস লাইফে। দেশব্যাপী মনিরামপুরকে আলোচনায় আনলেন সাংবাদিক নির্যাতন করে মোবাইল কোর্টে সাজা দিয়ে। সে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের নিছার আলীর ছেলে। তবে তার পিতা কাশিপুর কাঁঠালতলা এলাকায় নাজিমের নানাবাড়ি ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করেন। এলাকাবাসী জানায়, তার পিতা এলাকার একজন বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলো। তবে তার পরিবার ২০১৩ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষে জোরেসোরে নির্বাচন করেন। স্বতন্ত্রপ্রার্থী এমপি নির্বাচিত হলে নাজিমের পরিবার হালে পানি পেয়ে যায়।
  • জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ধরে নেওয়া এবং নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। রবিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে কারাগার থেকে মুক্ত হন আরিফ। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে।
    ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরিফ বলেন, ‘শুক্রবার (১৩ মার্চ) রাত ১২টার পর খেয়ে শুয়ে পড়ি। তখন একজন বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেন। পরিচয় জানতে চাইলে কেউ পরিচয় জানাননি। পরে আমি সদর থানার ওসিকে ফোন দেই। ফোন দেওয়ার কথা শুনে বাইরে থাকা আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন লোকজন দরজা ভেঙে বাসায় ঢোকে।
    জামিনে মুক্ত হওয়ার পর বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগান তাকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তার বর্ণনায় জানা গেছে, শুক্রবার (১৩) মধ্যরাতে আরিফের বাড়িতে হানা এবং তাকে নির্যাতনের নেতৃত্ব দিয়েছেন আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন। যদিও তার দাবি, ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া তার বর্ণনাতেই স্পষ্ট এ ঘটনা সম্পর্কে সবই জানতেন ডিসি সুলতানা পারভীন। ঘটনার পর বিভিন্ন সময় তিনি বলেছেন, ঘটনার দিন তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারি ছিলেন।
    ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরিফ বলেন, ‘দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেই আরডিসি নাজিম উদ্দিন আমার মাথায় কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। মারতে মারতে আমাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে চোখ-হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। এরপর আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টার দিতে চায়। আমাকে বারবার বলে, তুই কলেমা পড়ে ফেল, তোকে এনকাউন্টার দেওয়া হবে। এ সময় আমি অনেক অনুনয় বিনয় করি। আমি আমার প্রাণভিক্ষা চাই। বলি, আমার বাবা-মা নেই, আমার দুটি সন্তান আছে। আমাকে যেন না মেরে ফেলা হয়। মেরে ফেললে আমার বাচ্চা দুটি এতিম হয়ে যাবে। পরে তারা আমাকে গাড়িতে করে একটি ভবনে নিয়ে যায়। আমি চোখের কাপড় একটু খুলে বুঝতে পারি এটা ডিসির কার্যালয়। আবার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে বিবস্ত্র করে। এরপর বেধড়ক মারধর করে বলে তোর ভিডিও করে রাখছি। এ সময় আমাকে গালাগাল করা হয়। এ সময় নাজিম উদ্দিন বারবার আরেকজনকে বলছিলেন, ডিসি স্যারকে ফোন দাও, মেসেজ দাও। কী করবো সেটা বলতে বলো?’
    প্রসঙ্গত, শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধাবোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
    কুড়িগ্রামে বাংলাট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক এবং পরে নির্মম নির্যাতনকারী আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন কক্সবাজারে এসিল্যাল্ড ছিলেন। অপকর্মে জড়িত থাকার কারণে সেখান থেকে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং এক বৃদ্ধকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। সাংবাদিক নির্যাতনকারী নাজিম গত এক বছর আগে কক্সবাজার সদরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
    কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, নাজিম উদ্দিন গত ২০১৭ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগ দেন। যোগ দেওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তিনি কারণে-অকারণে সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করে মজা পাওয়া তার স্বভাব। তিনি নিজেকে “বড় কিছু” মনে করতেন। সাংবাদিকদের তিনি পাত্তাই দিতেন না। নানা অনিয়ম, সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে তাকে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হয়।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, নাজিম উদ্দিন কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী (ভূমি) হিসেবে যোগ দেওয়ার পরপরই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে রাঙ্গামাটির লংগদুর মতো দুর্গম উপজেলায় বদলি করা হয়। এটি শাস্তিমূলক বদলি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলেও তার বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সর্বশেষ তার ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি (৬২) নামে এক বৃদ্ধকে কানে ধরে টেনা-হেঁচড়া করে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে শুধু কক্সবাজার জেলা প্রশাসন নয়, চট্টগ্রামসহ পুরো দেশে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা বিব্রতবোধ করেন।
    নাজিম সম্পর্কে কক্সবাজারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী ও সাংবাদিক রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন ভীষণ দুর্নীতিবাজ একজন কর্মকর্তা। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। সে সময়ে আমি হাজির হলেও দুর্নীতিবাজ নাজিম হননি। আমার লিখিত আবেদনের পর তাকে শাস্তিমূলকভাবে রাঙ্গামাটির লংগদুতে বদলি করা হয়। পরে নাজিমের এক বয়স্ক বৃদ্ধকে কানে ধরে টেনে-হেঁচড়ে আনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে সেটি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিগোচর করা হলে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন আমাকে বলেন, এজন্য তিনি বিব্রত।’
    রাশেদুল মজিদ আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের সাবেক এই এসিল্যান্ড দায়িত্ব পালন করার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নানাভাবে অপকর্ম করে গেছেন। খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার আশ্বাসে ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। সাধারণ মানুষদের নানাভাবে নাজেহাল করতেন।’
    উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে আরডিসি নাজিম উদ্দিনসহ অন্যরা মারধর করে তুলে নিয়ে যায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে তাকে ভয়াবহ নির্যাতন করে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সাংবাদিক আরিফকে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে রাখা হয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।