ঢাকারবিবার , ১৭ জানুয়ারি ২০১৬
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হারিয়ে যাওয়ার পথে মনিরামপুরের বিখ্যাত নলেন গুড়ের সুনাম

admin
জানুয়ারি ১৭, ২০১৬ ২:৫৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

হারিয়ে যাওয়ার পথে মনিরামপুরের বিখ্যাত নলেন গুড়। যে রস বা গুড়ের জন্য বিখ্যাত যশোর জেলা তারই একটি অংশ মনিরামপুর উপজেলা। এখানকার রস, গুড় ও রসের পিঠা এক সময় দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও স্বজনদের জন্য পাটানো হতো। বর্তমানে সে ঐতিহ্য টিকে আছে কোনও রকমে লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে । খেজুর গাছের স্বল্পতা, জ্বালানির অভাব ও দক্ষ গাছি না থাকা এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে জানান স্থানীয়রা। তবে খেজুর গাছের স্বল্পতায় সরকারিভাবে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। নলেনগুড়, পাটালি ও ঝোলা গুড়ের জন্য বিখ্যাত উপজেলার রোহিতা, কাশিমনগর, ভোজগাতি, ঢাকুরিয়া, মনিরামপুরসদর, খেদাপাড়া, শ্যামকুড়, নেহালপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামসহ উপজেলার প্রায় সকল এলাকা। দেশসেরা নলেন গুড় তৈরিতে বিশেষ ধরনের খেজুর রস ব্যবহার করা হয়। যাকে নলেন রস বলে থাকে এ অঞ্চলের মানুষ। নলেন গুড় থেকে তৈরি হয় নলেন গুড়ের সন্দেশ, ক্ষীর ও পায়েস। এ গুড় মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে আশ্বিনের শেষের দিকে এসব এলাকায় বিস্তৃত জমি জুড়ে থাকা সারি সারি খেজুর গাছ প্রস্তুত করতেন গাছিরা রস আহরণের জন্যে। অথচ সেই গাছ, রস ও গুড়ের খ্যাতি ও গাছিদের ব্যস্ততা সবই আজ বিলীন হওয়ার পথে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের জালঝাড়া গ্রামের কৃষক আঃ সোবহান বিশ্বাস বলেন, আগে আমাদের ৪ পনেরও (১পন হলো ৮০টি) বেশি খেজুর গাছ ছিল। এখন আছে মাত্র কুড়ি খানিক (প্রায় ২০টি) গাছ। ৫ ভাইয়ের মধ্যে গাছগুলো ভাগ হয়ে যাওয়ায় এখন আর তেমন গাছ তোলা (খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করা) হয় না। শুধু নিজেরা খাওয়ার জন্যে সামান্য কিছু গাছ কাটি। একই অবস্থা এই প্রতিবেদকেরও। নিজের খরিদকৃত জমিতে কিছু খেজুর গাছ আছে। গত কয়েক বছর হাতে-পায়ে ধরে একজন গাছির দ্বারা গাছ কাটাই। মনের ক্ষোভে গাছগুলো ইটের ভাটার জ্বালানী হিসেবে বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। ৪বছরের অবোধ মেয়ের কান্নাকাটির কারনে বেঁচা সম্ভব হয়নি। অথচ চলতি বছর গাছ তোলার লোকের অভাবে রস, গুড় কিম্বা পিঠার মুখ আর দেখা হলোনা। এলাকার কৃষক শফিয়ার রহমান জানান, তাদের আগে ৩০০টির উপর গাছ ছিল। এখন ৬০/৭০টির মতো গাছ আছে। তাও সব গাছ তোলা হয় না। শীতের সময়টা নলেন পাটালি বানিয়ে বিক্রি করি। বাজারে যাওয়া লাগে না, বাড়িতে এসে লোকজন বসে থাকে, গুড় বানানো হলে নিয়ে যায়। দামটা ভাল পাই। কিন্তু যে গুড় তৈরি করি তা পূর্বের তুলনায় খুবই কম। খেজুরের গাছ কেটে সেখানে অন্যগাছ লাগানো, মাঠগুলোতে ধান-সবজির আবাদ, রস জ্বালানোর কাঠের স্বল্পতা, পেশাদার গাছির অভাব ইত্যাদি কারণে এখন আর আগের মত গুড় পাটালির মৌ মৌ গন্ধ পাওয়া যায় না। তিনি আরও জানান, এখন গুড় তৈরির খরচের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের বেশ তফাত। এ কারণে কৃষকরাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অধিক পরিমাণে গাছ লাগাতে তিনি সরকারের পৃষ্টপোষকতা দাবি করেন। স্থানীয় সমাজসেবক ও সাবেক মেম্বর সাইফুল কাদীর জানান, শুনেছি সরকার যশোর জেলায় খেজুর গাছ রোপনের ব্যবস্থা করেছে। এটি কার্যকর হলে আশা করছি আমাদের হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরে পাবো। কিন্তু গাছির অভাব পূরণের কোন স¤ভবনা দেখছিনা। এদিকে স্থানীয়রা জানান, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নলেনের সুনাম কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করছে। তারা আখের গাদ দিয়ে তৈরি মুচি, চিনি ও নারকেল দিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে। অথচ ওই গুড়ে খেজুরের রসের ন্যুনতম কোন উপস্থিতি নেই। তাদের এ প্রতারণার ব্যবসাও প্রকৃত গুড় তৈরিকারীদের সমস্যায় ফেলছে বলে জানান তারা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, মনিরামপুরের গুড়ের যে সুখ্যাতি রয়েছে তাতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা বৃদ্ধি করা হলে গুড় থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এ উপজেলায় বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ খেজুর গাছ রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ গাছ থেকে রস আহরণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে সরকার দেশে তাল-খেজুর গাছ সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের অধীনে সরকারি রাস্তার পাশে ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। তারপরও কথা থেকে যায়, খেজুর গাছ লাগাবে সরকার কিন্তু গাছি বানাবে কে?

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।