যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পৌর এলাকার নিরীহ ২ যুবককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি তারা ট্রাকে পেট্রোল বোমা মারতে গিয়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে ও এলাকায় শোকের মাতমসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে অজানা আতংক দেখা দিয়েছে। মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা খবীর আহমেদ দাবি করে বলেন, ২ জন যুবক মোটরসাইকেল আরোহী হয়ে গত সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে উপজেলার বেগারীতলা নামক স্থানে ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করতে যায়। এ সময় তারা ওই ট্রাকের তলে পড়ে মারাত্মক আহত হয়। পরে মণিরামপুর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদেরকে উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাদেরকে মৃত ঘোষনা করে। তবে ট্রাকটির মালিক বা চালক কে ছিল এবং কোথায় যাচ্ছিল সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেননি ওসি মোল্লা খবীর। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মণিরামপুর ফায়ার সার্ভিস দপ্তরের ইনচার্জ শরীফুল ইসলাম জানান, রাত ৩ টার পর থানার ওসি সাহেব ফোনের মাধ্যমে উক্ত ঘটনা জানালে, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ২ যুবক রাস্তার উপর পড়ে আছে এবং পুলিশ ছাড়া আর কোন লোক সেখানে ছিল না।
পরে তাদেরকে ফায়ার সার্ভিস গাড়ীতে তুলে যশোর হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং এর বেশী আর কিছুই আমরা বলতে পারিনা বলে জানান, ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা।গতকাল মঙ্গলবার সকালে জানাযানি হয় যশোর হাসপাতাল মর্গে মণিরামপুরের ২ যুবকের লাশ পড়ে আছে। পরে খোজ মেলে তারা পৌর এলাকার দূর্গাপুর গ্রামের স’মিলের নৈশ প্রহরী আতিয়ার রহমানের পূত্র চা বিক্রিতা লিটন হোসেন (২৫) এবং তাহেরপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল আজিজের পূত্র কাঁচামালের আড়ৎ শ্রমিক ইউসুফ আলী (২৭)। হাসপাতাল মর্গের একটি সূত্র জানায়, নিহতের মাথায় একাধিক কোপের দাগ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের দাগ রয়েছে। নিহত লিটনের পিতা আতিয়ার ও মাতা রওশনারা বেগম কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমাদের সন্তান চা বিক্রি করতো ও মাঝে মধ্যে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতো। পুলিশ আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে, আমি পুলিশের নামে মামলা করবো বলে আহাজারী কন্ঠে জানান লিটনের মা রওশনারা। একই দাবি নিহত ইউসুফ পরিবারসহ এলাকাবাসীর। একটি সূত্র জানায়, ঘটনারদিন রাত ১১ টার পর পুলিশ উপজেলার খর্দগাংড়া গ্রামের একটি বাড়ী থেকে মোটরসাইকেলসহ ইউসুফ ও লিটনকে আটক করে। কিন্তু এমন দাবি অস্বীকার করেন ওসি মোল্লা খবীর আহমেদ। এদিকে নিহত লিটনের হিরোহোন্ডা মোটরসাইকেলটি আংশিক ভাংচুর অবস্থায় থানায় দেখাগেছে বলে জানিয়েছে তার পিতা আতিয়ার রহমান। নিরীহ ২ যবক নিহত হওয়া এবং ঘটনার বিবারণ রহস্যজনক হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ভীতিসহ অজানা আতংক দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসির জোর দাবি তারা বোমা মারতে গিয়ে গাড়ীর চাকায় মারা গেছে নাকি? চলমান পরিবেশ সামাল দিতে এবং অপরাধীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করতে কোন মহল তাদেরকে হত্যার পর নাটক সাজিয়ে অপপ্রচার করতে চাচ্ছে তার সঠিক তদন্ত প্রকাশ পাবে। গতকাল বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে নিহতদের লাশ এলাকায় আনার পর পারিবারে ও এলাকাবাসির মাঝে শোকের মাতম লক্ষ্য করা যায়। পরে হাজার-হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে নামাজে জানাযা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাপন সম্পন্ন করা হয়।