ঢাকারবিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সরকার পতন চায় বিএনপি, সংলাপ নয়

admin
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫ ৪:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবার আরও কঠোর অবস্থানের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। দলটির চলমান কর্মসূচি সামনের দিকে যতই এগুচ্ছে, ততই যেন মনোভাবে কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন সংলাপের কথা বলা হলেও এবার সে পথ থেকে সরে এসেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। দলটির পক্ষ থেকে তাই বলা হচ্ছে- সরকার যতদিন না পর্যন্ত পদত্যাগ করছে, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি জোট। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এসব জানা গেছে। বিএনপির চলমান আন্দোলন থামানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)। গত শুক্রবার বিকেলে বনানীর নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মধ্যবর্BNPতী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত ২০ দলের ডাকা অবরোধ চলবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার পদত্যাগ করলে নির্বাচনসহ সব বিষয়েই আলোচনা হতে পারে। আর সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লিয়াঁজো কমিটির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে ২০ দলীয় জোট।’
দলীয় বিভিন্ন সূত্রমতে, গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা দলটি এখন আরও সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। অবরোধের পাশাপাশি খানিকটা থেমে থেমে হরতালও দিয়ে আসছে দলটি। টানা ৩৬ ঘণ্টা, ৭২ ঘণ্টার হরতাল পালন শেষে আজ রোববার থেকে ফের ৭২ ঘণ্টার হরতাল দিয়েছে ২০ দল। ফলে বিএনপির আন্দোলন প্র্রতিনিয়ত আরও শক্ত অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। এমনটাই মত একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের। দলটির নীতিনির্ধারকদের দাবি, টানা এক মাসের অধিক সময় ধরে আন্দোলনকে টেনে নিয়ে আসা বিএনপির বড় ধরনের সফলতা। চলমান আন্দোলনে দলীয় নেতাকর্মীরা সুদৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির দাবি আন্দোলনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজ একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারের প্রতি চাপ বাড়াচ্ছে।
দলটির দায়িত্বশীল বিভিন্ন নেতার সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানে সরকারের ওপর নানামুখী চাপ অব্যাহত রেখেছে জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোকে চলমান আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল্য বলে দাবি করছেন তাঁরা। এছাড়া আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা দেশ-বিদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এক্ষেত্রে তাঁরা অনেকটা সফল হয়েছেন বলেও দাবি ২০ দলীয় জোট নেতাদের। এদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিএনপির আন্দোলন সফল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। তাঁরা বলেন, চলমান আন্দোলন কর্মসূচি চাঙ্গা থাকার কারণেই সরকার এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর সে কারণে ২ জানুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেওয়া হয়। কর্মসূচি শেষ না হতেই গত মঙ্গলবার তা ৩৬ ঘণ্টা বাড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করা হয়। ফলে গেল সপ্তাহে কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি পরীক্ষার্থীরা। আর আজ রোববার থেকে ফের হরতাল দেওয়ায় আজকের পরীক্ষাটিও স্থগিত করা হলো। তাই বিরোধী জোটের হরতালের কারণে আজকের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এছাড়া ১৮ ঘণ্টা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দেওয়ায় আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা আসবে বলে অনেকটা নিশ্চিত ২০ দলের হেভিওয়েট নেতারা। এদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ পালন করে আসা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আন্দোলনকে বেগবান করতে যাচ্ছে। অবরোধের সঙ্গে হরতাল মাঝে মাঝে যুক্ত করা হলেও এবার তা লাগাতার রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি জোট। সূত্রমতে, এবার কিছুতেই কর্মসূচি থেকে ফিরে আসবে না বিএনপি জোট। সে কারণেই এবারকার বিশ্ব ইজতেমা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতেও অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে দলটি। তবে চলমান আন্দোলনে পেট্রলবোমার নৃশংসতাসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নাশকতায় কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন তারা। এসব সহিংসতার দায় নেবে না ২০ দলীয় জোট। এদিকে বর্তমান আন্দোলনে ২০ দলীয় জোট নাশকতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সিরিয়াভিত্তিক ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে বিএনপির কোনো পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনের নামে বিএনপি জোট দেশটাকে জল্লাদখানা বানাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আর পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা বন্ধ করে রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘পালিয়ে পালিয়ে বোমা মেরে সাধারণ মানুষ হত্যা করবেনÑ এটা মেনে নেওয়া যায় না। আন্দোলন করতে হলে ঘরে বসে নয়, মাঠে থেকেই করতে হবে। এদিকে সহিংসতা দমনে সরকার আরও কঠোর আইন করার কথা ভাবছে বলে জানালেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর। সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে কঠোর আইন আসছে, যাতে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা থাকবে। আইনটি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। অচিরেই এর বাস্তবায়ন হবে। এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘পেট্রলবোমা হামলা সহিংসতার সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নন। সরকারি এজেন্টরা এসব করছে। তিনি বলেন, ‘এসব হামলা করে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার।’ এদিকে সরকার রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে দেউলিয়া করা এবং দলের মধ্যে ভাঙনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল বেশ ক’জন নেতা। তাঁরা বলেন, সরকার শুধু বিরোধী দলের আন্দোলনকে স্তিমিত করার পাঁয়তারাই নয়, পাশাপাশি বিএনপির মধ্যে ভাঙনের চেষ্টা করছে। তারা বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আন্দোলন থেকে বিমুখ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক, তা কোনো কাজে আসবে না। বিএনপিকে ভাঙা কখনই সম্ভব হবে না। দলের নেতাকর্মীরা অতীতের সব মান-অভিমান ভুলে গিয়ে এখন আন্দোলনের মঞ্চে আছে। সরকার দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করলেও নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা আছে। আর তাই আন্দোলনে সফলতা আনার জন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মী বদ্ধপরিকর।’এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ভোরের পাতাকে বলেন, ‘চলমান আন্দোলন নিয়ে বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে। এ কর্মসূচি থেকে পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। তাই বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট দূরীকরণে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত। রাজনৈতিক সমাধান না হলে দেশে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে মন্তব্য করে সাবেক এই সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে এক দল অন্য দলকে দোষ না চাপিয়ে সমাধানের পথে আসতে হবে। তবেই শান্তি ও স্বস্তি পাবে দেশের জনগণ।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।