যশোর জেলার সদর উপজেলার মানিকদিহি গ্রামের রেললাইনের ধার থেকে বৃহস্পতিবার সকালে যুবদল নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মেজবাহ উদ্দিন চন্টুর (৪০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রেল লাইনের পাশ থেকে চন্টুর (৪০) মৃতদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। যশোর-ঝিনাইদহ রেললাইনের পাশ থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়।
যশোর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে রেললাইনের পাশে মৃতদেহটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। উদ্ধারকৃত মৃতদেহটি মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের রাশেদ আলীর ছেলে নাবেত যুদর নেতা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মেজবাহ রহমান চন্টুর বলে তার ভাই রুহুল কুদ্দুস মন্টু জানান। নিহত যুবদল নেতার ভাই রুহুল কুদ্দুস মন্টু দাবি করেন, মৃত্যুর দু’দিন আগ থেকে তার ভাই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে চলন্ত ট্রেনের নীচে ফেলে দিয়েছে। তবে পুলিশ দাবি করেছে চন্টু তাদের হেফাজতে ছিল না। নিহত চন্টু মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের রাশেদ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বর ও ওই ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
চন্টুর স্বজনরা হাসপাতালে জানান, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার যুবদল নেতা মেজবাউর রহমান চন্টু মেম্বারের বিরুদ্ধে পুলিশ ষড়যন্ত্র মূলক কয়েকটি মামলা দায়ের করে। বিশেষ করে বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সময় মনিরামপুরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে। যাকে পূজি করে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুেদ্ধ একের পর মামলা রুজু করে। যার কয়েকটি মামলায় ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে পুলিশ চন্টু মেম্বারকে অভিযুক্ত করে। এছাড়া, ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা খুন হন। যার মধ্যে স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা শফি কামাল ও যুবলীগ নেতা শাহীন ওরফে ঠুঠো শাহীন হত্যা মামলায় জড়ানো হয় চন্টু মেম্বারকে। এ বিষয়ে নিহতের ভাই মন্টু বলেন,”পুলিশ তাকে আটকের জন্য জন্য কয়েক দফা অভিযান চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে যুবদল নেতা মেজবাউর রহমান চন্টু মেম্বার গাজীপুরে গিয়ে আত্মগোপণ করেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি চন্টুর। মঙ্গলবার রাতে তাকে গাজীপুর থেকে পুলিশ আটক করে। আটকের কিছু সময় পরই তাকে নিয়ে পুলিশ মনিরামপুরের উদ্দশ্যে রওয়ানা দেয়। বুধবার সকালে একটি মাইক্রোতে করে তাকে যশোরে আনে পুলিশ বলে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে মানিকদিহি গ্রামে রেললাইনের ধারে এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে তারা পুলিশে খবর দেন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। রেলপুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মার্গে পাঠায়। নিহত চন্টুর ভাই মন্টু লাশ শনাক্ত করেন। নিহত চন্টুর ভাই রুহুল কুদ্দুস মন্টুর দাবি এর আগে মঙ্গলবার গাজীপুর থেকে তার ভাইকে আটক করে পুলিশ। বুধবার দুপুরে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফয়েজ আহমেদ, জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রেশমা শারমিন, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সবাই চন্টু নামে কাউকে আটকের কথা মিডিয়ার কাছে অস্বীকার করেন। এদিকে, রুহুর কুদ্দুস মন্টু বুধবার দিনভর এবং বৃহস্পতিবার সকাল দশটা পর্যন্ত চন্টুকে যাতে ডিবি আদালতে হাজির করে সে তদবির করে বেড়ান। সরকারি দলের বেশ কয়েকজন নেতার মাধ্যমে তারা খানিকটা আশ্বস্তও হন যে, ডিবি তাকে আদালতে হাজির করবে। এরই মধ্যে বেলা সাড়ে দশটার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানতে পারেন, সদর উপজেলার মানিকদিহি রেললাইনের ধারে চন্টুর লাশ পড়ে আছে। এরপর যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের ফোন ধরেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) কেএম আরিফুল হক ফোন ধরে বলেন, ‘ভাই আইজিপি মহোদয় যশোর আসছেন। আমরা সবাই প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। কোথাও কোনো লাশ পাওয়া গেছে বলে শুনিনি। জানতে পারলে জানাব।’ পুলিশের মুখপাত্র বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের কোনো খবর আমার কাছে নেই।’ এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট শহিদ ইকবাল বলেন, ‘দুই দিন আগে ঢাকা থেকে চন্টুকে আটক করা হয়। বুধবার সকাল আটটার দিকে তাকে যশোর ডিবি পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। এখন শুনছি তার লাশ পাওয়া গেছে যশোর সদরের কোনো এক গ্রামে রেললাইনের ধারে।’ তিনি জানান, নিহত মেজবাহউদ্দিন চন্টু ছিলেন মণিরামপুরের খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বর ও ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি খেদাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি। পুলিশই যে তাকে খুন করেছে, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত।
মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্যা খবির আহমেদ বলেন, ‘নিহত চন্টু মেম্বারের বিরুদ্ধে কৃষকলীগ নেতা শফি কামাল ও যুবলীগ নেতা শাহীন হত্যাসহ মোট ১৫টি মামলা আছে।