কয়েকদিনের টানা বর্ষণে যশোরের মণিরামপুরের নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়ে খাল বিল নালা ডোবা একাকার হয়ে গেছে। চারদিকে শুধু পানি থৈ থৈ করছে। মৎস্যঘেরসহ পুকুর,ডোবা ও ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়ে একাকার হয়ে যাওয়ায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে দেশী প্রজাতির ছোট বড় অনেক মাছ। ফলে মৎস্য শিকারীদের মাঝে মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। এদিকে মৎস্য শিকারের সহজ সামগ্রী ঘুনি বুচনি ও চারো বোনার কাজে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা,নেহালপুর ও মনোহরপুর ইউানয়নের কারিগর পাড়ায়। কারীগররা রাত দিন পরিশ্রম করে তৈরি করছেন এসব সামগ্রী। শুধু তাই নয়,নিজেদের তৈরি এসব সামগ্রী বাজারে বিক্রি করতে সাপ্তাহিক হাটের দিনগুলোতে সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। সোমবার সরেজমিনে এলাকাগুলো পরিদর্শনে এমনই চিত্র চোখে ধরা পড়ে।
সুত্রে জানাযায়,উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব এলাকার হরিনা,বাটবিলা,কামিনিডাঙ্গা, ঝিকোরডাঙ্গা, কুশখালী,মহিষদিয়া, আশান নগর,পোড়াডাঙ্গা,সুজাতপুর ও কুশোরীকোনা এলাকার কয়েক হাজার পরিবার সরাসরি মাছ শিকারের সামগ্রী ঘুনি,চারো ,বুচনি ও টোবা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বছরে ১২ মাস একাজ চললেও বর্ষা মৌসুমে এগুলোর চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়। ফলে এখন ওইসব এলাকার নারী-পুরুষ সকলে মিলে একাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। কেউবা তৈরি করছেন চারো ঘুনি,কেউবা ব্যাস্ত তালের আশ ও বাঁশের চটা তৈরির কাজে। কাজটি তারা অতি উৎসাহে করলেও কেউ কেউ জানালেন হতাশার কথা। হরিনা গ্রামের কাত্তিক হালদার জানান,‘সারা বছরই কাজ চলে। তবে আষাড় থেকে অগ্রাহন মাস পর্যন্ত আমরা বেশি ব্যাস্ত থাকি।’ কি দামে এগুলো বিক্রি করেন জানতে চাইলে তিনি জানান,‘যখন মাছ ধরার গোন লাগে তখন প্রতিটি বুচনি ৬৫-৭০ টাকা,চারো ঘুনি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। একই গ্রামের সুকুমার হালদার জানান,‘তালের আঁশ ও বাঁশের চটা রেডি থাকলে দিনে ১৫-১৬ টা বুচনি তৈরি করা যায়। এগুলো আমরা স্থানীয় নেহালপুর,মণিরামপুর ও কেশবপুর বাজারে বিক্রি করি। বাটভিলা গ্রামের অমর ঢালি জানান,‘দিনে ২-৩ টা চারো বুনা যায়। তবে বাঁশের দাম বেশি হওয়ায় লাভ তেমন একটা হয়না।’
সংসার চলে কেমন জানতে চাইলে অমর ঢালি আরো বলেন,‘এতে কি আর চলে,ঐ কোন রকম যায় আরকি। একই গ্রামের জয়ান্তি ঢালি জানান,সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে চারো বোনার কাজ করি।’ তবে এলাকার কয়েকজন কারিগর জানান,‘গোনের সময় বাদে বছরের অন্যান্য মাসে এসব জিনিসের দাম অনেক কম থাকে। তখন যদি কিছু মাল কিনে রাখা যায়,তাহলে গোনের সময় ভালো লাভ করা যায়। একাজে তারা সরকারীভাবে ক্ষুদ্র ঋণ পেলে উপকৃত হবেন বলেও সুবর্ণভূমিকে জানিয়েছেন।