মনিরুজ্জামান টিটো :
ষোল সালের ঝড় দেহিছি বাবা, এরহম ক্ষেতি হয়নি। ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে মানষির পানি বয়ে খাওয়াছি, মরার আগে এরহম এট্টা কিছু হবে তাতো জানিনে। এহন আল্লা যা করেছে তাই মানে নিয়া ছাড়া তার কিছু করার নেই। আল্লার কাছে দুয়া করি এই বাবারা আমার জন্যি টীন দেছে, টাহা দেছে। ঘর উঠোয় দেবে কয়েছে। কথা হচ্ছিল শতবর্ষী বৃদ্ধা সায়রা বেগমের সাথে। উপজেলার গাংড়া গ্রামের মৃত ইউসুপ মোড়লের স্ত্রী সায়রা বেগমের যতদুর মনেপড়ে উনিশ’শ ষোল সালে তার বয়স ৪/৫ বছর। মাত্র ১০ বছর বয়সে স্বামীর সংসারে আসেন সায়রা বেগম। সংসার জীবনে তার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ছেলেরা ঢাকায় থাকে। খোঁজ খবর নেয়না মায়ের। মেয়ে দু’টি স্বামী পরিত্যাক্তা হয়ে মায়ের কাছে থাকলেও তাদের সন্তানদের নিয়ে নিজেদেরই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। নিজের সংসার চালাতে নিজেই ধরেন সংসারের হাত। প্রায় ৬০ বছরেরও বেশী সময় ধরে মণিরামপুর বাজারের বিভিন্ন দোকানে পানি সরবরাহের কাজ নেন। এখন আর পানি টানার শক্তি নেই। যে বাজারে শেষ শক্তি থাকা পর্যন্ত পরিশ্রম করে রোজগার করেছেন, সেই বাজারেই এখন ভিক্ষা করে মুখে দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করেন। কাকে কলসি নিয়ে জীবনের এতোটা বছর পানি টেনে নুয়ে পড়েছেন সায়রা বেগম। সম্প্রতি মণিরামপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে তার একমাত্র মাথা গোঁজার একমাত্র ছোট্ট ঘরের পুরোটাই উড়ে যায়। জীবনের শেষ বয়সে দাঁড়াবার কোন জায়গা থাকে না তার। বুধবার ভিক্ষা করতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সায়রা বেগম। নজরে আসে উপজেলা স্কাউট সাধারন সম্পাদকের। ঘটনাটি তুলে ধরে মায়রা বেগমের ছবিসহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন তিনি। ফেসবুক থেকেই ঘটনা জানতে পারেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলুর সাথে পরামর্শ করে বৃহস্পতিবার সায়রা বেগমের বাড়ি যান তারা। ঘর তৈরীর জন্য উপজেলার পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত টীন এবং অর্থ সহায়তা তুলে দেন মায়রা বেগমের হাতে। সহায়তা পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সায়রা বেগম। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা খানম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান, উপজেলা স্কাউটস্ সাধারন সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ লিটন, শ্রমিক নেতা চিন্ময় মজুমদার বাবু, যুবলীগ নেতা তারেক মির্জা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।