ঢাকারবিবার , ১২ অক্টোবর ২০১৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আজ সব হারাচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী

admin
অক্টোবর ১২, ২০১৪ ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

images

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করবেন না। এ সংক্রান্ত কোন পত্রও পাঠাবেন না। দলের এক সিনিয়র নেতার মারফত বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় অপশনটি বেছে নিতে হচ্ছে সরকারকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সদয় অনুমোদনের জন্য সংবিধানের ৫৮ (২) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে রেখেছে। আজ বা কালকের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানান, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাই নতুন করে স্পষ্ট করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হবে এ বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রজ্ঞাপন জারির আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর পরই বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট হয়ে যাবে। সূত্র জানায়, সংবিধানের ৫৮ (২) ধারাকে উদ্ধৃত করে সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পেলেই এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ তার কাছে পাঠানো হবে। এরপরই তা প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর পর অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সংবিধানের ৫৮ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী যে কোন সময়ে কোন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করতে পারবেন এবং ওই মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হলে তিনি প্রেসিডেন্টকে ওই মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটানোর জন্য পরামর্শ দিতে পারবেন।’ এর আগে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংবিধানের ৫৮ (১) ধারা কার্যকর করা যায় কিনা এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের কাছে পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেই তা গৃহীত হবে। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী তা করতে চাইছেন না। সিনিয়র এক নেতা মারফত তা জানিয়েও দিয়েছেন। ওদিকে গতকাল সকাল থেকেই মিডিয়া কর্মীদের মধ্যে চাউর হয়ে যায় লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগ বা অপসারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খোলা রাখার কারণেই এ বিষয়টি চাউর হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বন্ধের দিন অফিস খোলা রাখা নতুন কিছু নয়। এর আগেও আমি বিদেশ থেকে আসার পর জমে থাকা কাজ করতে অফিস খোলা রেখেছেন। এর আগে গত ৩রা অক্টোবর নিউ ইয়র্ক সফর শেষে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণার কথা জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট দেশে ফেরার পরই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। পবিত্র হজ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করায় লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও দল থেকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। এর ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম কোন মন্ত্রীকে অপসারণ করা হচ্ছে। এরশাদ সরকারের আমলে যখন-তখন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অপসারণ করা হতো। ১৯৯১ সালের পর এ ধারা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। মন্ত্রীদের কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নিয়ে তা গ্রহণ করার রীতি চালু হয়। এতে সরকারেরও অনেকটা মুখ রক্ষা হয়।
লতিফের দুর্নীতির সত্যতা মেলাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়: লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগ বা অপসারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির আগেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনানুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনের সংস্থা কর্তৃক শিল্প প্রতিষ্ঠান বিক্রয়কৃত বা হস্তান্তরিত বা বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে আইন বা বিধি অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে জানতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গত ১লা অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক নাফিউল হাসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনের সংস্থা কর্তৃক শিল্প প্রতিষ্ঠান বিক্রয়কৃত বা হস্তান্তরিত বা বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে আইন বা বিধি অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত কমিটি কর্তৃক বিভিন্ন সুপারিশ দেয়া হয়। ওই সব সুপারিশের মধ্যে একটি ছিল- ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় একক সিদ্ধান্তে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে কিনা ওই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে।’
পাঁচ মন্ত্রিসভা কমিটিতে লতিফের বদলে অন্য মন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তি: পাঁচ মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এসব কমিটিতে লতিফ সিদ্দিকীর বদলে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কাজ শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিকবিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক), জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য লতিফ সিদ্দিকী। এ সব কমিটিতে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
লতিফের পাশে মন্ত্রিসভার কেউ নেই: আচার-আচরণে রুক্ষতার কারণে মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রায় সবাই তাকে অপছন্দ করতেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও তটস্থ থাকতেন তার ভয়ে। তিনি যে কাউকে যে কোন পরিবেশে অপমান করতেন, ধমক দিতেন। এ কারণে মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের নেতাদের কাছে তিনি অ-জনপ্রিয় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। এ পরিস্থিতিতে এখন কেউই তার পক্ষে কথা বলছেন না বা সহানুভূতিও দেখাচ্ছেন না। মোট কথা লতিফের পক্ষে এখন কেউ কথা বলছেন না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকী সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অবস্থান টের পাওয়ার পর ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র আমলারা তার রোমিং টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন না।
বাদ পড়ছেন দলীয় পদ থেকেও: মন্ত্রিত্ব হারানোর পর দলীয় পদ থেকেও বহিষ্কার হচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী। আজ এ সিদ্ধান্ত নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হবে। সূত্র জানায়, লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত আসছে বৈঠক থেকে। এ জন্য দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হতে পারে। এছাড়া দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে কিনা এ বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।