ঢাকারবিবার , ২৩ অক্টোবর ২০১৬
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আজ মনিরামপুরের ৫ সূর্য সন্তানের শাহাদাৎ বার্ষিকী : অবহেলায় পড়ে আছে বধ্যভূমি : নেই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ 

Tito
অক্টোবর ২৩, ২০১৬ ২:০৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

8801716833434মনিরুজ্জামান টিটো ঃ

আজ ২৩ শে অক্টোবর। মণিরামপুরের পাঁচ সূর্য্য সন্তানের ৪৫ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের হাতে পাঁচ সূর্য্য সন্তান নির্মমভাবে শহীদ হন। দীর্ঘ ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার এসকল শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেননি, বরং প্রতি বছর এদিনটিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মাজার জিয়ারতের মধ্যে দিয়ে তাদেরকে স্মরণ করে থাকেন। শহীদ এ পাঁচ সূর্য্য সন্তানারা হচ্ছেন মুশফিকুর রহমান তোজো, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, ফজলুর রহমান ফজলু, আহসান উদ্দীন খান মানিক ও আসাদুজ্জামান আসাদ।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন সময় ২৩ অক্টোবর সকালে যশোর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর বড় ভাই কমরেড মুশফিকুর রহমান তোজোর নেতৃত্বে মণিরামপুর উপজেলার রত্নেস্বরপুর গ্রামের জনৈক আব্দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল উচ্চ শিক্ষিত ও মেধাবী স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র এ পাঁচ যুবক। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের চোখ এড়াতে পারেনি তাঁরা। স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আঃ মালেক ডাক্তারের নেতৃত্বে মেহের জল্লাদ, ইসাহাক, আব্দুল মজিদসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার তাদের আশ্রয়স্থল চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাদেরকে আটক করে। এর পর চোখ বেঁধে চিনাটোলা বাজারের পূর্বপাশে হরিহরনদীর তীরে আনা হয়। চালানো হয় তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে লবন দেয়া হয়। এভাবে তাদেরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয় ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এখনও কালের স্বাক্ষী হিসেবে বেঁচে আছেন চিনাটোলা গ্রামের বাজার এলাকার শ্যামাপদ নাথ (৭৬)। শ্যামাপদ নাথ সেদিন ছিলেন ৩০/৩২ বছরের টগবগে যুবক। শ্যামাপদ সে সময় চিনাটোলা বাজারে দিনে কুলির কাজ ও রাতে বাজারের নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন। রাজাকারদের নির্দেশে ওইদিন শ্যামাপদকে হরিহরনদীর ওপর ব্রীজ পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়।

বর্বর এই হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী শ্যামাপদ নাথ জানান, ওই দিন রাত আটটার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মুক্তিসেনা আসাদ, তোজো, শান্তি, মানিক ও ফজলুকে ব্রিজের পাশে আনা হয়। এ সময় আমার দায়িত্ব ছিল ব্রীজের আশে-পাশে যেন কোন লোক চলাচল না করে। এর পর পরই তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় সৈয়দ মাহমুদপুর গ্রাম সংলগ্ন হরিহর নদীর তীরবর্তী স্থানে। তার কিছুক্ষন পর রাজাকার কমান্ডারের বাঁশি বেঁজে উঠার সাথে সাথে গর্জে ওঠে রাইফেল। মুহুর্তের মধ্যে পাঁচ তরতাজা যুবকের নিথরদেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে আমি ও স্থানীয় আকব্বর আলী সেখানে তাদেরকে সমাহিত করি। শ্যামাপদ সেই পাঁচ সূর্য্য সন্তানের বর্বর হত্যাকান্ডের স্মৃতি আজো ভুলতে পারেনি। তার আক্ষেপ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা অকাতরে শহীদ হলো তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে আজ পর্যন্ত কোন সরকার কিছু করলো না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের সেই বধ্যভূমি। শহীদ স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মশিয়ার রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষনের জন্য বাম দলের পক্ষ থেকে বধ্যভূমিতে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। বাম দলের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আজ পর্যন্ত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এ ব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আলাউদ্দিন জানান, উল্লেখিত ৫ শহীদদের কবরসহ উপজেলার সকল শহীদদের স্মৃতি ও বদ্ধভুমি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কয়েক দফা দাবি জানানো হয়েছে।

পদার্থ বিজ্ঞানে এমএসসিতে প্রথম স্থান অধিকারকারী কমরেড মুশফিকুর রহমান তেজো যশোর ষষ্টিতলা এলাকার এড. হাবিবুর রহমানের ও পরিমা রহমানের ২ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছেলে। তার ভাই খালেদুর রহমান টিটো সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। কমরেড সিরাজুল ইসলাম শান্তি শার্শা উপজেলার সদর এলাকার আছির উদ্দীন ও জবেদা খাতুনের ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্য সবার ছোট ছিলেন। তারা পিতার সাথে যশোর শহরের ষষ্টিতলা কমরেড তেজোর বাড়ির পাশেই বসবাস করতেন। বড়ভাই অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম পেশায় ছিলেন শিক্ষক। মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মৃত রজব আলী দফাদার ও নুরজাহান বেগমের ছেলে মেধাবী সন্তান কমরেড ফজলুর রহমান ফজলু। স্বাধীনতার চেতনা বুকে লালন করে সাংগঠনিক কাজে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার তোলা গ্রামের আফাজ উদ্দীন খানের ছেলে কমরেড আহসান উদ্দীন খান মানিক। যতদুর জানা যায়, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে বসবাস শুরু করেন। যশোর শহরের খড়কী এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত আলী ও সাজেদা বেগমের সন্তান ছিলেন কমরেড আসাদুজ্জামান আসাদ। ৪ ভায়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বললে তারা আক্ষেপ করে জানান, শুধু মাত্র কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ হতে শহীদের মাজার রক্ষার্থে যতসামান্য কিছু করা এবং দিনটিতে দোয়া অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি আজও।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।