ঢাকাশুক্রবার , ৪ আগস্ট ২০১৭
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মণিরামপুরে ভাসুরের লাঠির আঘাতে মা ও গর্ভজাত শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

Tito
আগস্ট ৪, ২০১৭ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি :
মণিরামপুরে ভাসু‌রের বিরু‌দ্ধে আয়েশা বেগম (৩৬) ও তার গর্ভের আট মাসের কন্যা সন্তানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আয়েশার মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যায় তিনি একটি মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। আয়েশা উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাটবিলা গ্রামের মুক্তার সরদারের স্ত্রী। মেহেদী (১৫), জিহাদী (৮) ও মুজাহিদ (২) নামে তার তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আ‌য়েশার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পিতার বাড়ির লোকজন সকালে ওই বাড়িতে আসলে মুক্তারের বাড়ির লোকজনের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
এদিকে গৃহবধু ও তার পেটের সন্তানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় এক‌টি চক্র দেনদরবার ক‌রে চ‌লে‌ছে। পুলিশ ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছে।
আয়েশার চাচা ছিদ্দিকুর রহমান জানান, ১৮-২০ বছর আগে ম‌নিরামপুর উপজেলার সিং‌হের খাজুরা গ্রামের আব্দুস সামাদ সরদারের কন্যা আয়েশার বিয়ে হয় একই উপ‌জেলার বাটবিলা গ্রামের মৃত ইসমাইল সরদারের ছেলে মুক্তার সরদারের সাথে। এরই ম‌ধ্যে তা‌দের তিন সন্তা‌নের জন্মের পর আবা‌রো আয়েশা আট মাসে অন্তঃসত্ত্বা হয়। কিন্তু মাস তি‌নেক আগে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি এলাকা থেকে দুই সন্তানের জননী এক মহিলাকে বিয়ে করে বাড়ি তোলেন মুক্তার। সেই থেকে সংসারে অশান্তি চলছিল। গত সপ্তাহ দু‌য়েক আগে চাউল ভাগাভাগি নিয়ে আয়েশার ভাসুর মমরেজ তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়ার একপর্যায়ে আয়েশা উপুড় হয়ে পড়ে যায়। এরপর মমরেজ মোটা লাঠি দিয়ে তার পেটে আঘাত করলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিষয়টি আয়েশার বড় ছেলে মেহেদী তাদের ফোনে জানায়। আয়েশার অবস্থা গুরুত্বর হলেও তাকে হাসপাতালে নিতে এগিয়ে আসেনি মুক্তারসহ তার পরিবারের কেউ। তখন মেহেদী ও তার ভাই জিহাদী মাকে উদ্ধার করে মণিরামপুর হাসপাতালে আনে। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বজনরা তাকে য‌শোর সদরে নিয়ে যান। আয়েশার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সেখানে চিকিৎসকরা জানান। যে কোন সময়ে আয়েশার গর্ভের সন্তান মারা যেতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও জানান চিকিৎসকরা। হাসপাতালে পাঁচ দিন রাখার পর তাকে সিং‌হের খাজুরা পিতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নয় দিন ছিলেন আয়েশা। এরমধ্যে স্বামীর বাড়ির কেউ তার খবর নেয়নি বলে অভিযোগ।
ছিদ্দিক আরও জানান,বিষয়টি তারা লিখিত আকারে দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার বাহাদুর আলীকে জানান। গত শনিবার চেয়ারম্যানের কাছে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে আয়েশাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন মুক্তার। সালিশে আয়েশাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হলেও গত এক সপ্তাকে তাকে হাসপাতালে আনা হয়নি বলে অভিযোগ করেন ছিদ্দিক।
প্রতিবেশী ভ্যানচালক জামির হোসেন বলেন,‘চাল নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছিল। তখন মমরেজ মোটা একটা লাঠি লিয়ে ওই মহিলাকে পিটতি যায়। টানাটানি করার সময় মহিলা পড়ে গেলে মমরেজ লাঠি দিয়ে ওর পেটে আঘাত করে।’ বিষয়টি জামির হোসেনের সামনে ঘটেছে বলে তিনি পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান।
আয়েশার ভাবি রাহেলা জানান, লাশের গোসল করানোর সময় তিনি সেখানে ছিলেন। আয়েশার বুকে লম্বা একটি দাগ এবং শিশুটির মাথায় ও দুই হাতে রক্ত জমাট হয়ে আছে। এগুলো আঘাতের চিহ্ন বলে দাবি রাহেলার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান মিন্টু বলেন,‘গতকাল সন্ধ্যায় মহিলা একটি মৃত কন্যা সন্তান প্রসব করে। পরে অধিক রক্তক্ষরন শুরু হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।’ এটা স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবী মেম্বরের।
দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার বাহাদুর আলী বলেন,‘মেয়েটিকে তার ভাসুর মেরেছে এমন অভিযোগ করে তার ভাই আফসার আহমেদ। শনিবারে তারা ক্ষমা চেয়েছে। আয়েশা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হলেও মুক্তার তা করেনি। পরে শুনি মহিলা ও তার পেটের সন্তান মারা গেছে। মমরেজের আঘাতে মা মেয়ের মৃত্যু হতে পারে এমনটি ধারনা করেন প্রবীন এই চেয়ারম্যান।
মণিরামপুর থানার ওসি মোকাররম হোসেন বলেন, একটা অভিযোগ শুনে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে জানলাম, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। ফলে লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।’

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।