ঢাকাবুধবার , ২৫ অক্টোবর ২০১৭
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আজ শহীদ আকরামের ৪৬ তম মৃত্যু বাষিকী : হারিয়ে গেছে সড়কটির নাম ও স্মৃতি ফলক

Tito
অক্টোবর ২৫, ২০১৭ ৪:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মনিৱুজ্জামান টিটো।।
মনিরামপুর উপজেলার অতি পরিচিত স্থান আকরাম মোড়। মোড়টি পৌর শহর থেকে রাজগঞ্জ সড়কে মাত্র এক কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। পৌরশহরের প্রাণ কেন্দ্র রাজগঞ্জ মোড় থেকে আকরাম মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির নাম আকরাম সড়ক। কেন এই মোড়টির নাম আকরাম মোড় এবং রোডটির নাম আকরাম রোড হলো তা অনেকে না জানলেও শুনলে যে কেউকে শিউরে উঠার কথা।

আকরাম মোড় বা আকরাম সড়ক নয়, আসলে সঠিক হবে “শহীদ আকরাম মোড়” ও “শহীদ আকরাম সড়ক”। ৭১’এর এই দিনে অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা আকরামকে রাজাকার বাহিনী নির্মম ভাবে হত্যা করে যে স্থানটিতে সেটিই আকরাম মোড় হিসেবে আজও সকলের কাছে অতি চেনা। মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে আকরাম হোসেন ৬ বোনের একমাত্র ভাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় আকরাম ২৬ বছরের টগবগে যুবক। কৃষি ডিপোমা শেষ করে সবেমাত্র দত্ত্বনগর কৃষি ফামে কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে চারিদিকে যুদ্ধের ডামা ডোল, চাকুরির মায়া ত্যাগ করে দেশ মাতৃকার টানে যোগদেন মুক্তি বাহিনীতে। মা জবেদা খাতুনের শত বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে আকরাম দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।

১৮ অক্টোবর গভীর রাতে আকরাম হঠাৎ বাড়ির উঠানে। হাতে এক ছড়া পাকা কলা। সঙ্গেবন্ধু সহযোদ্ধা বাকড়া এলাকার ইসমাইল। কিন্তু দূভাগ্য বাড়িতে আসার পথে আকরামের সাথে দেখা হয় তেতুলিয়া গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার অহেদে আলীর সাথে। এ চিন্তায় আকরাম রাত টুকু বাড়িতে ঘুমাইনি। প্রতিবেশির একবাড়িতে –আকরাম-ইসমাইল থাকে। সকালে সূর্য্য টগবগ করছে, আকরাম ঘরের জানালা দিয়ে মাকে ডাকছে, মা কলা দিয়ে পান্তা ভাত খাব ! ছেলের ডাকে মা ঘরে থেকে বেরিয়ে আসে। মা জবেদা রানśা ঘরে ভাত দিয়েছেন। আকরাম-ইসমাইল এক সাথে মায়ের হাতের খাবার খাওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে চারিদিক থেকে বাড়ি ঘিরে ফেলেছে সশস্ত্র রাজাকার দল। ভাত খাওয়া হলো না তাদের। আকরাম-ইসমাইলকে তুলে নিয়ে যায় তারা। বাড়ির সামনে নিয়ে শহীদ আকরামের মা জবেদা, বোন তহমিনার চোখের সামনে ব্র্যাশ ফায়ার দিয়ে ঝাঝরা করে দেয় ইসমাইলেরর বুক। শহীদ হন ইসমাইল। এরপর আকরামকে নিয়ে যাওয়া হয় মনিরামপুর বাজারে রাজাকার ক্যাম্পে। মঙ্গলবার এ সব কথা জানতে কথা হয় শহীদ আকরামের বোন তহমিনার সাথে। তিনি সামান্য কিছু বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। মা জবেদা আকরামের দুবোনকে নিয়ে বাজারে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে এসে রাজকার কমান্ডারদের হাত পা ধরে জীবন ভিক্ষার দাবী জানালে ঘাতকরা জানিয়ে দেয় ২৫ অক্টোবর ছেলের লাশ বাড়ি যাবে। যথারীতি ২৫ অক্টোবর ক্যাম্প থেকে আকরামকে নিয়ে যাওয়া হয় জুড়ানপুর গ্রামের ওই মোড়টিতে। রাজাকার কসাইখ্যাত জল্লাদ মেহের, জামাল ও শ্যামনগরের কুখ্যাত ইয়াকুব সশস্ত্র ভাবে সেখানে বাঁশ, দড়ি, শাবল দিয়ে বাঁশের আড়া তৈরী করে আকরামের পা দু’খানা উপরের দিকে দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়। জল্লাদ মেহের, জামাল, ইয়াকুব, জীবিত অবস্থায় আকরামের শরীর থেকে বেয়নেট দিয়ে মাংশ কেটে ক্ষতস্থানে লবন ছিটিয়ে উল্লাশ প্রকাশ করতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শী কাশিপুর গ্রামের মমতাজ উদ্দিন জানান, সে দিন শত শত মানুষ এ অবস্থা দেখে নির্বাক হয়ে ছিল। দু ঘন্টা এ ভাবে উল্লাস করার পর তাকে হত্যা করে মেহের জল্লাদ। ঘোষনা করা হয় ২৪ ঘন্টার মধ্যে লাশ নামানো যাবেনা।

শহীদ আকরাম স্বরনে আকরামের ঘনিষ্ট বন্ধু সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম লুৎফর রহমান তার স্মৃতি ধরে রাখতে মনিরামপুর বাজারের রাজগঞ্জ মোড় থেকে আকরাম মোড় পর্যন্ত রাস্তাটিকে ’’শহীদ আকরাম সড়ক’’ ঘোষনা করেন এবং রাজগঞ্জ মোড়ে একটি স্মৃতি ফলকও নির্মান করেছিলেন। কিন্তু অন্ধকারে হারিয়ে গেছে সড়কটির নাম এবং স্মৃতি ফলক। সরকারী ভাবেও তার মৃত্যু দিবসটি পালন করা হয় না। বছর তিনেক আগে মনিরামপুরের আকরাম স্মৃতি সংসদ নামে একটি কমিটি গঠিত হয়।

 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।