ঢাকাশনিবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মণিরামপুরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র ভাসমান সেতু

Tito
ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭ ১:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মনিরুজ্জামান টিটো ।।
ভোট আসে, ভোট যায়। সরকারও বদলায়, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি ঝাঁপা গ্রামবাসীর সাথে। প্রতি নির্বাচনের সময়ে প্রার্থীরা ওয়াদা করলেও একটি গ্রামের প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের জন্য মেলেনি একটি সেতু। তাই কর্তৃপক্ষের দিকে আর চেয়ে না থেকে পূর্বপূরুষ থেকে চলমান দূর্ভোগের অবসান ঘটাতে নিজেরাই নির্মান করছেন প্রায় এক কিলোমিটারের ভাসমান সেতু। যশোরের মণিরামপুরের দ্বীপাঞ্চল খ্যাত ঝাঁপা গ্রামের কয়েকজন যুবকের চিন্তা চেতনা বাস্তবে রূপ দিতে প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে ঝাঁপা বাওড়ের উপর নির্মিত হচ্ছে প্লাস্টিকের ড্রাম আর লোহার ভাসমান সেতু। সম্পূর্ণ গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মিত ভাসমান সেতু দেশের একমাত্র ভাসমান সেতু হতে চলেছে।
জানাযায়, মণিরামপুর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ঝাঁপা গ্রামের প্রায় চারিদিক জুড়ে রয়েছে পানি। একদিকে কপোতাক্ষ নদ, আর তিন দিকেই বিস্তৃর্ণ রয়েছে ঝাঁপা বাওড়। উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য প্রায় দশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঘুরে আসতে হয় ঝাঁপা গ্রামের বাসিন্দাদের। এছাড়া রয়েছে বাওড় পারাপারের একমাত্র অবলম্বন নৌকা।  শুধু বর্তমান প্রজন্মই নয়, ওই গ্রামের প্রতিটি পরিবারের পূর্ব পুরুষদেরও জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে। এ থেকে মুক্তি পেতে তাই বর্তমান প্রজন্ম বিকল্প হিসেবে ঝাঁপা বাওড়ের পানির ওপর দিয়ে ভাসমান সেতু তৈরির পরিকল্পনা শুরু করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক শুরু করেন কার্যক্রম। এ সেতু তৈরীতে প্রায় কোটি টাকা গ্রামবাসী সম্মিলীত ভাবে  ব্যয় করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। ১৩’শ ফুট দীর্ঘ ও ৯ ফুট প্রশস্থ এ সেতু নির্মাণ করতে ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রম ও গ্রামবাসী কাছ থেকে পাওয়া কোটি টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যারেল ও লোহার শীট ও এ্যাঙ্গেলের সমন্বয়ে সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যে সেতু দিয়ে সহজে ভ্যান গাড়ী, মোটর সাইকেল বা ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারে।
সরেজমিন খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, রাজগঞ্জ বাজারের নিকটের খেয়াঘাট (যেখান থেকে নৌকায় মানুষ পারাপার হয়) থেকে ভাসমান সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। কথা হয় সেতু নির্মান কাজ পরিদশনে থাকা ঝাঁপা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ শওকত আলীর সাথে। তিনি জানান, উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন উপজেলার বৃহত্তর জলমহল ঝাঁপা বাওড় বেষ্টিত এই ঝাঁপা গ্রাম। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী মল্লিকপুর গ্রাম থেকে বাওড়টির উৎপত্তি। প্রায় ৬ কি:মি দৈর্ঘ্যের বাওড়টি প্রায় ৩ বর্গ কিমি ঝাঁপা গ্রামকে বেষ্টিত করে ওই গ্রামেরই আরেক প্রান্ত কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী লক্ষিকান্তপুর গ্রামে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা অধ্যুষিত গ্রামটিতে রয়েছে ৩টি ওয়ার্ড। বংশপরমপরায় তারা বছরের পর বছর নৌকায় পারাপার হয়ে আসছেন। গ্রামের বাইরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই নৌকা। বৈরী আবহাওয়ায় রুদ্ধ হয়ে যায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমটিও। এতে অনেক সময় মুমুর্ষ রোগী কিম্বা জরুরী কাজে অন্যত্র যাওয়া মানুষকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় অনেকেই জানান, গত ২৯ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে ঝাঁপা গ্রামের মরহুম ডাক্তার আজিবর সরদারের বড় ছেলে শামসুজ্জামান মন্টু (৫৮) হার্ট আ্যাটাক হলে হাসপাতালে নেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেও যানবাহন না পাওয়ায় পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। গত ৬ মার্চ রাতে ঝাঁপা গ্রামের কাঁচামাল বিক্রেতা মতিয়ার রহমানের প্রসূতি মেয়ে রোকেয়া বেগম (২০) কে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ৫ অক্টোবর সকালে রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসার পথে আব্দুল আজিজের ছেলে সুমন (১২) ঝাঁপা বাওড়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়। বাওড়ের জেলেরা তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌছে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ঝাঁপা গ্রামবাসী বাওড়ের উপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছে। কিন্তুু তাতে কোন সুফল মেলেনি বলে তাদের অভিযোগ। বংশপরমপরায় তাদের এরক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ভাসমান এ সেতু নির্মানের অন্যতম উদ্যোক্তা ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান টুটুল জানান, সরকারি দপ্তরগুলোতে বার বার আবেদনের পরও সাড়া না পেয়ে ভাসমান সেতু নির্মানের জন্য চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিটিং করা হয়। তাতে সাড়াও মেলে আশাতীত। সংগঠনের ৫৬ জন সদস্যের অর্থায়নে শুরু করা হয় ১৩শ’ ফুট দৈর্ঘ্যর ভাসমান সেতু নির্মানের। সংগঠনের বাইরে অনেক কৃষক, শ্রমিক শরীক হচ্ছেন তাদের সাথে। আজিজ নামের এক ব্যক্তি জমি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছেন। এসময় তিনি কিছুটা আবেগ প্রবন হয়ে পড়েন। যার প্রস্থ হচ্ছে ৯ ফুট। আর সেতু নির্মানে ব্যবহ্নত হচ্ছে ৮৮৯টি বড় আকারের প্লাষ্টিকের ড্রাম বা ব্যারেল। যা সংযুক্ত রাখার জন্য লোহার এ্যাঙ্গেল ও শীট ব্যাবহার করা হয়েছে। একই সাথে ব্যারেলের উপর দিয়ে চলাচলের জন্য দেয়া হয় ১৩শ’ ফুট দের্ঘ্যর লোহার পাত। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম ও একমাত্র ভাসমান সেতুটি।
ভাসমান সেতু নির্মানের ধারনা আসে ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ আরেক উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামানের মাথায়। তিনি বলেন, প্লাস্টিক ব্যারেল নির্মিত ভেলার উপর ভারি মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখেই এ ভাসমান সেতুর ধারনা নেয়া হয়। সেমোতাবেক উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে ধারনার কথা জানালে তিনিও সন্মতি দেন বলে জানান। এরপর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোতি নিয়েই এ ভাসমান সেতু নির্মান কাজে হাত দেয়া হয়। প্রায় সাড়ে ৩ মাস ধরে সেতুটি তৈরীর পর আগামী পহেলা জানুয়ারি সাধারন মানুষ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ভাসমান এ সেতুটি।
মেহেদী হাসান টুটুল আরো জানান, সেতুর উপর দিয়ে ভ্যান, রিকশা ও ইজিবাইকসহ হালকা যান চলাচল করতে পারবে। পারের জন্য খেয়াঘাটে অপেক্ষামান জাহানারা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে তাদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে, এতে তারা খুবই খুশি।
উপজেলা প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান বলেন, তার জানামতে দেশে এ ধরনের ভাসমান সেতু আর নেই, মানুষ চলাচলের জন্য ভালো। কিন্তু ভারি যান চলাচলে দৈবাত কোন কারনে ব্যারেল লিকেজ হলে-সেক্ষেত্রে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।