ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিষ মুক্ত ফল খাওয়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মণিরামপুরের আফজাল

Tito
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০ ১:১৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি ॥
আমরা সকলে ফলন বাড়ানো ও সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করি। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। এই ফল খেয়ে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। বিষয়টি ভীষণ পীড়া দিত তাঁকে। তাই বিষমুক্ত ফল খেতে উৎসাহিত করতে প্রচার শুরু করেন তিনি। শুধু কি তাই, নিজে বিষমুক্ত ফল বাগান গড়ে তোলেন। সেই বাগান থেকে ফল এনে মানুষকে খাওয়ান। এখন তাঁর কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন বেকার যুবক বিষমুক্ত ফলের বাগান করেছেন। বিষ মুক্ত ফল খাওয়ানোর এমন মহত উদ্যোগ নিয়েছেন আফজাল হোসেন নামের এক যুবক। তাঁর বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার লাউড়ী গ্রামে। আফজাল হোসেন বাগানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন না। সার হিসেবে ব্যবহার করেন নিজের তৈরি ট্রাইকো কম্পোস্ট ও কেঁচো কম্পোস্ট। পোকা দমনে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করেন প্রাকৃতিক বালাইনাশক। ব্যবহার করেন আলোর ফাঁদ। পানির অপচয় রোধে গাছে পাইপ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। উৎপাদিত ফল ভালো মানের থলেতে ভরে বিক্রি করেন। মোট ২৩ বিঘা জমিতে আফজাল হোসেনের নার্সারী বাগান। ২০১৩ সালে বাগান শুরু করেন তিনি। বাগানে এখন ২১ প্রজাতির আড়াই হাজার ফলের গাছ রয়েছে। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে মাল্টা, চায়না কমলা, থাই পেয়ারা, দেশি ও কাশ্মীরি আপেলকুল, কাঠিমন, বারি-৮,আ¤্রপালি, মল্লিকা ও চোষা আম, দেশি ও থাই জাতের আমড়া, ড্রাগন, মালয়েশিয়ান শরবতি লেবু, থাইল্যান্ডের কাগজি লেবু, আঙুর, লটকন, ভিয়েতনামের হাইব্রিড নারকেল, কতবেল, ড্রাগন, বিলাতি গাব ও শরিফা (আতা জাতীয় ফল)। এ ছাড়া তিনি বাগানে পরীক্ষামূলক কাশ্মীরি আপেল ও নাশপাতির চারা লাগিয়েছেন। সারা বছর তাঁর বাগানে কোনো না কোনো ফল থাকে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আফজালের বাগানে গাছের ডালে ঝুলে আছে অসংখ্য মাল্টা এবং গাছের ডালে ডালে ফুলে ভরা। পাশের গাছেই ঝুলছে পেয়ারা, আমড়া সহ অনেক রকম ফল। এক বাগানে ২১ প্রজাতির ফল। সেখানে কাজ করেন ১০-১২ জন লোক।
যেভাবে শুরু
নিরাপদ ফলের ধারণা আফজালের মধ্যে আসে ২০১৩ সালে ফলবাগান করার পর। তিনি দেখলেন, বাজারে যেসব ফল বিক্রি হচ্ছে, তাতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে যেসব ফল আসছে, তা–ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে রাসায়নিক দিয়ে। ২০১৫ সাল থেকে তিনি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই নিরাপদ ফল উৎপাদন শুরু করেন। আফজাল জানান, সাধারণত ফলের বাগানে রাসায়নিক সার ছাড়াও তিন মাত্রার কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এ সব ভেবে তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জ্যোতি প্রসাদ ঘোষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার এমন মহৎ উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং বর্তমানেও তিনি আফজাল হোসেনকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
উদ্বুদ্ধ হলেন যাঁরা
আফজাল হোসেনের দেখাদেখি এলাকার অন্তত পাঁচ ব্যক্তি নিরাপদ ফলের বাগান করেছেন। তাঁরা হলেন মনিরামপুর উপজেলার মাছনা গ্রামের বেলাল হোসেন, লক্ষনপুর গ্রামের আবদুর রহমান, মুজগুন্নী গ্রামের আব্দুল করিম, লাউড়ী গ্রামের আল আমিন ও বাঙ্গালীপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান। মনিরামপুর উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের আবদুর রহমান বলেন, ‘আফজাল হোসেনকে দেখে দেড় বিঘা জমিতে আমি বিষমুক্ত ফলের বাগান করেছি। বিষমুক্ত ফল উৎপাদন ও এই ফল খাওয়ার জন্য প্রচার চালাতে মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ান আফজাল। গ্রাম থেকে গ্রামে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন। বাজার কিংবা বিদ্যালয়ের সামনে বেশি প্রচার চালান তিনি। মোটরসাইকেলের হাতলে ঝোলানো থলেতে থাকে নিজের বাগানের অন্তত দুই ধরনের বিষমুক্ত ফল। থাকে ছুরি। চলতি পথে মানুষ দেখে মাঝেমধ্যে থামেন তিনি। ছুরি দিয়ে ফল কেটে তাঁদের খাওয়ান। তাঁদের বোঝান। এভাবে বিষমুক্ত নিরাপদ ফলের ধারণা তিনি ছড়িয়ে দেন মানুষের মধ্যে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক উদ্যোক্তা এই বাগান দেখতে আসেন এবং নেন পরামর্শ।
অর্থনৈতিক অবস্থা
আফজাল হোসেন বলেন, আমি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় সবাই আমার প্রশংসা করে এবং বাহ বাহ দিয়েছে। আমি বিদেশ থেকে যে অর্থ এনেছিলাম তার সম্পূর্ণ অর্থ খরচ করেছি আমার নার্সারীতে। বর্তমানে আমি অনেক অর্থনৈতিক সমস্যায় আছি, আমি সরকারীভাবে আর্থিক কোন সহযোগিতা এখনো পাইনি। আমি বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ করেছি সবাই আশ্বাস দেয় কিন্তু বাস্তবে কেও ধরা দেয় না। আফজাল হোসেন বলেন, আমি যদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাই তবে আমি আমার বাগান আরো প্রসারিত করতে পারবো।
আফজালের স্বপ্ন
আফজাল হোসেন বলেন, ‘মানুষের কর্মসংস্থান, মানুষকে বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদন এবং মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর এই তিন উদ্দেশ্য নিয়ে আমি এগিয়ে চলেছি। এ জন্য আমি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, সব খরচ বাদে ফল ও মাল্টার কলম বিক্রি থেকে মাসে দেড় লাখ টাকার মতো আয় হয়। এক বছর পর তা বেড়ে দুই লাখ টাকার মতো হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী ৩ বছরে তিনি তাঁর বাগানের পরিধি বাড়িয়ে ১০০ বিঘা করতে চান। এতে কমপক্ষে ৮০-৯০ জনের কর্মসংস্থান হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, স্বল্প মাত্রার কীটনাশক প্রয়োগ করা ফল খেলে শরীরের তেমন ক্ষতি হয় না। পানিতে একটু ডিটারজেন্ট মিশিয়ে তাতে ১৫-২০ মিনিট ফল ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করে খেলে শরীরের জন্য তা ক্ষতি করে না। তবে দীর্ঘদিন বাজারে থাকা প্রক্রিয়াজাত ফল খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিষমুক্ত ফল থেকে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, জানতে চাইলে বলেন, কীটনাশক প্রয়োগ করা ফল মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে পাকস্থলীর সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, হার্ড ও কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা হয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।