এস.এম. হাফিজুর রহমান।।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র চীন, আর এই চীনের উহান শহর থেকে করোনা রোগের সূচনা। ৩১ ডিসেম্বর উহানে নিউমোনিয়া রোগ ছড়াতে দেখে চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করেন। এরপর ১১ জানুয়ারি সেখানে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তবা কোন প্রাণি এই রোগের উৎস ছিল। সেই প্রাণি থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি একজনের দেহে প্রবেশ করেছে, আর সেই থেকেই এই রোগটি একজন মানুষের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়েছে।
এই করোনা ভয়ঙ্করভাবে ছোবল দিয়েছে গোটা বিশ্বকে, আর তাই থরথর করে কাপছে বিশ্ববাসী। দ্রুত গতির করোনা ভাইরাস তড়িৎভাবে বিচরণ করছে এক মানচিত্র থেকে অন্য মানচিত্রে। দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকেও স্পর্শ করেছে ঘাতক করোনা। সারা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশও স্থবির হয়ে পড়েছে। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় ঘিরে রেখেছে পুরো বাংলাদেশকে, এ যেন অচেনা অজানা এক ছোবলে আক্রান্ত এই বাংলাদেশ। আমাদের ছোট্ট একটি দেশ, যে কোন বৃহৎ দূর্যোগ পরিস্থিতিকে তাৎক্ষণিক সামাল দেওয়ার সক্ষমতার চেয়ে অক্ষমতাই আমাদের বেশি। তার মোটা দাগের প্রমাণ রানা প্লাজা, বনানীর এফ আর টাওয়ার অগ্নিকান্ড, পুরান ঢাকার নিমতলী ট্রাজেডি।
অত্যন্ত ব্যতিত হৃদয়ে মহাভিমানে কথাগুলো বলতে হচ্ছে, কিছু বাকপটু বড় চেয়ারে আসিন লোকেদের দাড়ি কমাহীন কিছু প্রকাশে আমাদের দেশ তো সিঙ্গাপুর-ব্যাংককে রূপ নিয়ে ছিল। বিশ্বের রোল মডেল ছিল। মধ্যম আয়ের দেশ, কিছুদিনের মধ্যেই কানাডায় রূপান্তরিত হবার কথা। কিন্তু এখন শুনছি ডাক্তারের পর্যাপ্ত ড্রেস নাই, করোনা পরীক্ষার যথেষ্ঠ পরিমান কীট নাই, সবাইকে পরীক্ষার সামর্থ্য নাই, যতটা প্রয়োজন অতটা কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নাই, ঢাকার বাইরে কোথায়ও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নাই। কেন এতো নাই নাই নাই নাই ? হঠাৎ করে আমরা কেন এত গরিব হয়ে গেলাম। জবাব দিন সেই শব্দবোমার রূপকারগণ।
এই মূহুর্তে মানুষকে বাঁচাতে কথা কম কাজ বেশি নীতিকে অবলম্বন করতে হবে। ডব্লিউএইচও বার বার জোরেসোরে বলছেন পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে। অন্য দেশগুলোর করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে কী ধরনের কৌশল নিয়েছে, তা আমাদের ভালেভাবে জানতে হবে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় দেশে আরও ৮টি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হচ্ছে। যন্ত্রপাতিও চলে এসেছে। যদি তাই হয় তাহলে অত্যন্ত ভালো খবর। মানুষকে বাঁচাতে যা যা করনীয় অতি দ্রুত সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষ বাঁচলেই কেবল দেশ বাঁচবে। বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনীয় ছাড়া সকল কর্মতৎপরতাকে স্তগিত করে সারা দেশকে লকডাউনের পথে হাটেত যাচ্ছে দেশ। এতে নাগরিকরা যেন আরোও হতাশায় পতিত না হয়, সরকারকে সেদিকে জোর নজর রাখতে হবে। উন্নত রাষ্ট্র নাগরিকদের পর্যাপ্ত সুবিধা দিচ্ছেন। এছাড়াও আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিনামূল্যে ৮ কোটি মানুষকে ছয় মাস চাউল দিবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের প্রাণ পোশাক খাতেও। একের পর এক ক্রয় আদেশ বাতিল হওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক। তিনি জানান, করোনার কারণে পোশাক খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। সামগ্রীকভাবে সবকিছু আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে।
জেলা, উপজেলায় শিল্পপতি, দানশীল, সামাজিক সংগঠন, বে-সরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যাংককে নিম্নিবিত্ত, কর্মহীন ও অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ ও সচেতনতাই পারে এ গভীর সংকট থেকে পরিত্রাণ দিতে। সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই এই মূহুর্তে দেশকে জাতীয় দূর্যোগ ঘোষণা করুন। দলমত সবাইকে একত্রে করে জাতীয় ঐক্য গঠন করুন। সবাই মিলে আল্লাহর রহমত নিয়ে একত্রে কাজ করলে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে এবং জনমনে হতাশা নয় বরং স্বস্তি ফিরে আসবে।
লেখক:
এস.এম. হাফিজুর রহমান
প্রতিষ্ঠাতা, নিসু ফাউন্ডেশন
চেয়ারম্যান, অক্সফোর্ড স্কুল এন্ড কলেজ, গাজীপুর।