ঢাকাবুধবার , ১ এপ্রিল ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সূর্যাস্তের দেশ জাপান, চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ হয়েও অন্য সময়ের মতই স্বাভাবিক

Tito
এপ্রিল ১, ২০২০ ৭:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি।।
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে চীনের এত কাছে থেকেও জাপান কিভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে। যেখানে চীন থেকে সুদূর ইউরোপ আমেরিকা আজ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে করোনা ভাইরাস কারনে।

জানুয়ারিতে চীন থেকে বিলাসবহুল জাহাজ ডায়মন্ড প্রিন্সেসের জাপানে যাওয়ার কারনে জাপানের কিছু মানুষ আক্রান্ত হওয়া শুরু হয়েছিল। ইউরোপ আমেরিকার মত ৪র্থ ধাপে ভাইরাসের আক্রমন হতে পারতো। কিন্তু তারপরেও দেশটির সবকিছুই খুবই সাধারন ভাবে চলছে।

জাপানের প্রতিটা অফিস আদালত খোলা আছে। জনগনের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পরিসেবাও সচল আছে। চলছে শপিং মল, মেট্রো ট্রেন, বুলেট ট্রেন। শুনলে অবাক হবেন জাপান তাদের আন্তর্জাতিক সিমানাগুলো খোলা রেখেছে। নেই কোন লকডাউন।

টোকিওতে বিদেশিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। টোকিও প্রচুর বিদেশী পর্যটকদের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। বিদেশীদের এখনও দেশের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।

কেবল বন্ধ রয়েছে স্কুল এবং জনসমাগমের অনুষ্ঠান।

পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে করনা ভাইরাসের আক্রমন সব থেকে বেশী। কারন সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারছে ভাইরাসটি এবং এই প্রক্রিয়া চালু রাখছে।

টোকিও এমনই একটা ঘনবসতিপূর্ণ শহর। তাছাড়া ইতালির মত বয়স্ক মানুষের বেশী বসবাস টোকিও শহরে। এতকিছুর ভেতর কিভাবে জাপান জনজীবন স্বাভাবিক রেখেছে সেটা আসলেই চিন্তার ব্যাপার।

আমার বিশ্লেষণ বলছে, এটি শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে জাপানিজদের সংস্কৃতির কারণে। করনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে যে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে সেই ব্যাপারগুলো জাপানের মানুষ শৈশব থেকেই প্রয়োগ করে আসছে।

১; জাপানের ৬০% মানুষ বাসার বাইরে বা ভ্রমনে বের হলে মুখে মাস্ক ব্যাবহার করেন। সামান্য সর্দি কাশি হলে মাস্ক পরা আবশ্যক । এটা জাপানের সংস্কৃতির একটি অংশ যা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে
না এবং ছড়ানোর সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে।
যে সকল যায়গাতে তাদের মুখোমুখি কথা বলা লাগে যেমন রিসেপশন, সরকারি বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল, ট্রেন স্টেশন পুলিশ স্টেশন সব যায়গাতে সব শ্রেণীপেশার মানুষ মাস্ক ব্যাবহার করেন।
শীতের সময় প্রতিটি বাচ্চাকে মাস্ক পরানো হয়। কেন জানেন? যেন কোন বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগলে সেটা অন্য কোন বাচ্চার ভেতর সংক্রামিত না হয়। জাপানিজদের সবার বাড়িতে ২ ধরনের মাস্ক সবসময়ই পাওয়া যায়। একটি কোডোম মাস্ক এবং অন্যটি সাধারণ মাস্ক। কোডোম মাস্কগুলো সাধারণত বাচ্চাদের জন্য ব্যাবহার করা হয়।

২ঃ পরিচ্ছন্নতা তাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। তারা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে না। এমনকি থুথু ফেলাতে হলেও সেটা নির্দিষ্ট জায়গাতে ফেলে।
জাপানি লোকেরা এমন জীবনযাপন করে যেন অন্য কেউ তাদের দ্বারা বিরক্ত না হয়। স্কুলে বর্ণমালা শেখানোর আগে তাদের কীভাবে পরিষ্কার থাকা যায় এবং আচার আচরণ শেখানো হয়।

৩ঃ তারা হ্যান্ডশেক করে না, তবে অভিবাদন জানাতে মাথা নত করে।

৪ঃ জাপানে হাত ধোওয়া সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এখানকার পাবলিক টয়লেট, অফিসের প্রবেশপথে এবং প্রতিটি পাবলিক স্পেসে সাধারণত সাবান এবং স্যানিটাইজার রয়েছে। এমনকি লিফটে ওঠার আগে, অফিসে ঢোকার আগে জাপানের মানুষ স্যানিটাইজার ব্যাবহার করে।
এখানে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা খুব সাধারণ, যা ভাইরাসের বিস্তারকে বাধা দেয়।

৫ঃ ওয়াশ্রুমে হাত ধোয়র পরে সিঙ্কের জায়গাটিও পরিষ্কার করে এবং মুছে রাখে যেন পরবর্তী ব্যক্তির পক্ষে এটির ব্যবহারটি আরামদায়ক হয়। পাবলিক মেট্রো স্টেশনগুলিতেও এটি একটি স্বাভাবিক অনুশীলন।

৬ঃ তারা বাইরে বেরোনোর ​​সময় মাঝে মাঝে হাত পরিষ্কার করার জন্য ভেজা(wet) টিস্যু প্যাকেট সাথে রাখেন।

৭ঃ তারা সাধারণত সবার সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে চলে স্বাভাবিক জীবনেও।

করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে এখন সমত্ব বিশ্ব যে সকল পধতি অবলম্বন করছে তা একজন জাপানিজ শৈশব থেকেই পালন করে আসছে সংস্কৃতির অংশ হিসাবে।
এই পধতিগুলো যথাযথভাবে পালন করার জন্য আজ জাপান তাদের দেশে লকডাউন প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে সমস্ত বিশ্ব লকডাউনের কারনে সামাজিক, অর্থনীতিক দিকদিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
একটা জাতি শুদ্ধ জীবনচর্চার মাধ্যমে হাজারো কঠিন সমস্যা থেকে উত্তরণ লাভ করতে পারে। জাপান তার উদাহরন। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।

কপিরাইট: Debprosad Karmoker Palash

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।