ঢাকাশুক্রবার , ৩ এপ্রিল ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিশ্বব্যাপী লকডাউন : বেঁচে থাকাটাই প্রবাসীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

Tito
এপ্রিল ৩, ২০২০ ২:০৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শাহ্ জালাল, ডেস্ক নিউজ।।
আজ মহামারি করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঘরবন্দী কর্মজীবী মানুষ বিশ্বব্যাপী লকডাউনে বেকার হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ প্রবাসীরা ফলে রেমিট্যান্সে বড় বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এখন পুরো বিশ্ব অবরুদ্ধ। বন্ধ আছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষ। অর্থনীতির শক্ত ভিত বলে খ্যাত প্রবাসী আয়েও করোনার আঘাত লেগেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ হঠাৎ করেই থমকে দাঁড়িয়েছে। আবার বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টাকা পাঠাতে পারছেন না প্রবাসীরা। কিছু কিছু দেশ থেকে অনলাইনে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ থাকলেও, দক্ষতার অভাবে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এতে গত ১০ থেকে ১৫ দিনে ধরে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রায় বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে নেগেটিভ। শুধু তাই নয়, গত ১৪ মাসের মধ্যে মার্চ মাসে প্রবাসীরা সব চেয়ে কম রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। গত ডিসেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অথচ সদ্য বিদায় নেওয়া মার্চ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জানাযায় আজ তারা ঘরে বন্দী। দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। কাজ নেই, আয়ের পথও বন্ধ। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে নিজেদের খরচ মেটানোই দায় হয়ে যাবে।
দেশের রেমিট্যান্স আহরণের সবচেয়ে বড় উৎস মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৫ মার্চ থেকে দেশটিতে লকডাউন চলছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানে দোকানপাট অফিস-আদালত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সবাই গৃহবন্দী থাকায় রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছে না প্রবাসীরা। একই অবস্থা অন্যান্য দেশে থাকা বাংরাদেশী প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও। বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স কমে গেলে অর্থনীতিতে আরও চাপ তৈরি হবে। কারণ গত কয়েক মাসে রফতানি কমে গেছে। আমদানির পরিমাণও কমছে। এ পরিস্থিতি ভরসা ছিলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিলো ২০ শতাংশের বেশি। তবে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সে সূচকেও পতন শুরু হয়েছে।

একজন সৌদি প্রবাসী জামাল জানালেন, ফেব্রুারি মাস থেকেই কাজ খুবই কম। মার্চে ওমরা বন্ধ করায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ ধরে বেকার আছে। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। আগের কিছু পাওনা অর্থ কারখানার মালিক দিয়েছে তা দিয়েই চলছে। মা-বউ-বাচ্চা দেশে আছে। তাদের খরচ পাঠানো দরকার। কিন্তু কাজ বন্ধ নিজেদেরই থাকা খাওয়ার খরচ নাই, দেশে টাকা পাঠাবো কীভাবে। এছাড়া সব বন্ধ, বের হলে পুলিশ ঝামেলা করে। তাই বাইরে যাই না, ঘরেই থাকছি। কয়দিন নামাজের জন্য বের হলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে তাও বন্ধ। আমরা খুব সমস্যায় আছি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরিকুল ইসলাম জানান করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় অচল। সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ। রেমিট্যান্স পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন অবসর সময় কাটাছেন বেশিরভাগ প্রবাসী।

যুক্তরাজ্য ইকবাল হাসান এখানে পুরো লকডাউন, কাজকর্ম বন্ধ। ঘর থেকে কেউ বের হতে পারে না। সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ। দোকানপাট বন্ধ থাকায় সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না প্রবাসীরা।

সিঙ্গাপুর থেকে সুমন বলেন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবে কয়েক জায়গায় রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ থাকলেও অনেকেই বাসা থেকে বের হচ্ছেন না পুলিশের ভয়ে এমনটি জানান প্রবাসীরা।

স্পেনে থেকে প্রবাসী সাংবাদিক মনিরুজ্জামান টিটো বলেন করোনাভাইরাস সংক্রামণে এই এপর্যন্ত এক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। সংক্রামিত হয়েছেন ৬৭ জন। লকডাউনের কারনে কাজ না থাকায় চরম বিপাকে অবৈধ বসবাসকারীরা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়: তাদের কোন খবর রাখেনা দুতালয়। বাংলাদেশ মিশন থেকে সহায়তা দেওয়ার ঘোষনা দিলেও সেটা নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের।

কথা হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী শরিফুল, রাসেল, হাফিজুর, বাবু, মারুফ, খলিল, আলম, বিল্লাল, শাশিম, মেহেদী, রনি সহ প্রয় ৫০জন প্রবাসীর সাথে তারা জানান, গত ১৮ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ায় সবকিছু বন্ধ। এ অবস্থা চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। কেউ বাইরে বের হতে পারছেন না, কাজ নেই। এখন প্রবাসীদের নিজের খরচ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকসহ মানি এক্সচেঞ্জগুলো বন্ধ থাকায় অনেকে চাইলেও রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না। শরিফুল বলেন, গত ১৪ দিন ধরে হোম কোয়রেন্টাইনে আছি। আমাদের কাজ-কর্ম সব বন্ধ। বাইরে বের হলে পুলিশী ঝামেলাই পড়তে হচ্ছে। এ জন্য খুব প্রয়োজন ছাড়া ভয়ে আমরা কেউ বাইরে যাচ্ছি না। আরও ১৪ দিন এভাবে থাকতে হবে। আল্লাহ ভালো জানেন এই মেয়াদ শেষে কাজে যোগ দিতে পারবো কি-না। যদি যোগ দিতে পারি তাহলে ভালো অন্যথায় বিপদে পাড়তে হবে।

বিশেষজ্ঞ ব্যাংকারা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে পুরা বিশ্বই এখন অচল। এসময় রেমিট্যান্স কমাটাই স্বাভাবিক। আমাদের রেমিট্যান্স আহরণ এর প্রধান প্রধান যেমন সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্য, ইতালি, জার্মানিসহ ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশগুলোও কঠিন অবস্থা পার করছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমছে। এক সপ্তাহ ধরে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এটা যে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। রেমিট্যান্স আমাদের একটা বড় শক্তি। এটি কমে যাওয়া মানে অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি বলে জানান এই ব্যাংকারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা অর্থবছর হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। কিন্তু তারপরেও এখনও পর্যন্ত কোন খোঁজখবর নেওয়া হয়নি প্রবাসীদেরকে সরকারে তরফ থেকে বলে অভিযোগ করছেন প্রবাসীরা। এমনকি এই সংকটকালে প্রবাসীরা দেশে আসলেও তাদেকে হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত। তাই আজ দেশে এসে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে অনেকে দেশে আসবেনা বলে জানিয়েছেন। তবে সারাবিশ্বে যেসব প্রবাসীর অবৈধ্য ভাবে বসবাস করছেন তাদের বেচঁ থাকাটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা হয়তো মরণ খ্যাতি করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে গেলেও না খেয়ে মরতে হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।