ঢাকারবিবার , ২৬ এপ্রিল ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নিয়ে অসহায়দের পাশে বেগম নুরুন্নাহার

Tito
এপ্রিল ২৬, ২০২০ ৬:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সাজেদ রহমান।।
বেগম নুরুন্নাহারকে হয়তো যশোরের এই প্রজন্ম চিনবে না। সে কারণে তার ছবি দিলাম। এবার বলি দেশজুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সাধারণ ছুটি থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষ পেটে ক্ষুধা করছে অন্যরকম এক লড়াই। কাজ না পেয়ে নিম্ন আয়ের লোকজন সাহায্যের আশায় রাস্তা-ঘাট বাজারের বাড়ির পাশে ভিড় করছে। এসব কর্মহীন অসহায় দরিদ্র মানুষের সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শহীদ মোশাররফ হোসেন এল.এলবি-এর সহধর্মিনী।
বয়সের ভারে ন্যুজ্ব বেগম মোশাররফ সরকারিভাবে পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার ভাতা দিয়ে এবং স্বজন শুভাকাঙ্খীদের সাথে নিয়ে করোনার এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
যশোরের মোশারফ হোসেন পরিবারের সকল সদস্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরিবারের তরফ থেকে মানবিক সহায়তার জন্য নিজেরাই খাদ্য সামগ্রি প্যাকেট তৈরি করছেন এবং তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৮৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা নারী বেগম মোশাররফ হোসেন।
১৯৭১ সালে যখন দেশ উত্তাল মোশারফ হোসেনের পুরো পরিবার আন্দোলন সংগ্রামে রাস্তায় নামেন। তাঁর কন্যা রওশন জাহান সাথী। আমাদের সাথী আপা বলেন, ‘‘২৫শে মার্চ রাতে আমাদের বাড়িতেও হামলা হয়৷ তবে আমরা এর ঘণ্টাখানেক আগে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলাম বলে রক্ষা পাই৷ আমার বাবা স্থানীয় সবাইকে নিয়ে যুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন৷ আমরা বাইরে দু’দিন কয়েকটি বাড়ি ঘুরে মামার বাড়ি গিয়েছি৷ কিন্তু সেদিন যশোর সেনানিবাস থেকে কর্নেল তোফায়েলের নেতৃত্বে পাঁচ/ছয় গাড়ি সৈন্য এসে বাড়িটা ঘেরাও করে৷ আমাকে গ্রেপ্তার করে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়৷ সঙ্গে আমার মা এবং খালাও ছিলেন৷ সেখানে পাক সেনারা আমাকে বিভিন্ন অস্ত্রের মুখে হুমকি দিচ্ছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছিল৷ এক পর্যায়ে তারা খুব অশ্লীল ভঙ্গিমায় অশ্লীল ইঙ্গিত করতে থাকে৷ আমার কাছ থেকে নানা তথ্য বের করার চেষ্টা করে৷ মিছিলের ছবি দেখিয়ে বলে তোমরা মিছিল করেছো, তোমরা পাকিস্তান ভাঙতে চাও৷ তোমরা চক্রান্ত করছ, তোমাদের শাস্তি হবে৷ এরপরে ওরা আমাকে দু’টি বিশেষ ঘরের সামনে নিয়ে যায়৷ একটি ঘরে দেখলাম বেশ কয়েকজনকে ভীষণ মেরেছে৷ রক্তাক্ত অবস্থা৷ ওরা খুব কাতরাচ্ছে৷ অপর ঘরটি হলো বিশাল ব্যারাক৷ সেখানে অনেকগুলো সৈন্য রয়েছে৷ তাদের সাথে আরো কিছু মানুষ এবং মেয়েরাও রয়েছে৷ দেখালো যে, আমি যদি তাদের কথা মতো তথ্য না দিই এবং সহযোগিতা না করি, তাহলে হয় আমাকে মেরে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে মেরে ফেলবে অথবা ঐ মেয়েদের মতো ব্যারাকে সৈন্যদের সাথে থাকতে হবে৷ এরপর কর্নেল তোফায়েল আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল৷ কিন্তু আমি শুধু এটুকু বললাম যে, হ্যাঁ, আমি মিছিল করেছি৷ কিন্তু এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারবো না৷ এরপর আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে, আমাকে যেখান থেকে ধরে এনেছেন, সেখানে রেখে আসেন এবং নজরবন্দি করে রাখেন৷ আপনার নিয়ন্ত্রণেই রাখেন কিন্তু সেনানিবাসে না রেখে ঐ বাসায় রাখেন৷ কর্নেল তোফায়েল আমার এই কথাটা রেখেছিল৷ রাত এগারোটার দিকে সে আমাদেরকে ঐ বাসায় পৌঁছে দেয় এবং তারপর থেকে পালাক্রমে সেনা পাহারার ব্যবস্থা করে৷ পরে জানতে পারি যে, যশোর জেলার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়ে আমাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছিল৷”
এছাড়া তখন যশোর শহরে মাইকিং করা হয়েছিল যে, রওশন জাহানের বাবাকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে বড় অঙ্কের টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে৷ কিন্তু তাঁর বাবা আগেই যুদ্ধে চলে যান বলে তারা আর ধরতে পারেনি৷ তবে তাঁদের বাড়িটাকে খালি পেয়ে সেটাকে রাজাকারেরা ঘাঁটি বানিয়েছিল৷” স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের মতো সাধারণ মানুষের পাশে এগিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানায় ওই পরিবারকে।

লেখক-
স্টাফ রিপোর্টার
দৈনিক জনকণ্ঠ, যশোর।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।