ঢাকাবুধবার , ৬ মে ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভয় – শেষ পর্ব

Tito
মে ৬, ২০২০ ৩:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ মনিরুজ্জামান।।
বিশ্বের যে কোন প্রান্তেই পুলিশিং একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এটি আর দশটি চাকুরীর মত নয়। এ জন্য পুলিশ অফিসারদের অধিকাংশেরই একটা মানসিক প্রস্তুতি থাকে ঝুঁকি নেয়ার।নিজের এবংঅন্যদের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি পুলিশ অফিসারদের নিজের উপর ঝুঁকি একসময় আর তেমন একটা গায়ে লাগেনা। কিন্তু অধিকাংশই ক্ষেত্রেই পরিবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তখন একটু দ্বিধা দেখা দেয় অনেকের মধ্যে।

করোনা কালের শুরুতেই একদিন পুলিশ লাইন্সে ফোর্সের সাথে কথা বলছিলাম। জানতে চাইলাম করোনা ডিউটি করলে কারো আপত্তি বা অসুবিধা আছে কিনা। সত্যি বলতে কি প্রায় কারোরই কোন ওজর আপত্তি,দ্বিধা শংকা দেখিনি- সবাই মোটামুটি প্রস্তুত। গত প্রায় ৫টি বছর ধরে জংগী নিয়েই মূলত কাজ করি। একাজটি সব সময়ই মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোন সময় যে কেউ যেকোন ধরনের বিপদে পড়তে পারে। এটা সবাই জানেও। কিন্তু দিনে রাতে যখনি যাকে কোন দায়ীত্ব দিয়েছি কখনোই কারো কাছ থেকে কোন “না” শুনিনি। অথচ এদের হিস্ট্রিটা কেমন একটু দেখুন। প্রায় সবাই বয়সে তরুন। অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সে জানে সে মারা গেলে তার পরিবারটিও মাঠে মারা যাবে। অনেকেই অবিবাহিত, সদ্য বিবাহিত, শিশু সন্তানের জনক/জননী। এমন বাস্তবতায়ও আমি ব্যক্তিগতভাবে কারো মধ্যে কোন বিকার দেখিনি।

অসীম সাহসী দুই একজন কনস্টেবল, এএসআই, এসআই, ইন্সপেক্টর বা এএসপি একাকী বা দুই একজন মিলে জংগীদের চেনা অচেনা ডেরায় গিয়েছে সংবাদ সংগ্রহ বা বিশ্লেষনের কাজে। কখনো হকার, রিক্সাওয়ালা, তরকারি ওয়ালা, সিএনজি চালক, মিস্ত্রী সহ নানা পেশাজীবির ভূমিকায় নিখুত অভিনয় করেছে। পথচারি, ডিশের লোক, মোবাইল কোম্পানী বা কুরিয়ার সার্ভিসের পিয়ন, রাজমিস্ত্রী, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী কত ভূমিকায় অভিনয় করেছে বা করে আমাদের কলিগরা তার কোন ইয়াত্তা নেই।

মানুষ তো খালি অপারেশনের সংবাদ টিভিতে দেখে পত্রিকায় পড়ে সাময়িক বাহবা দেয়। কিন্তু এর পিছনে কত মানুষের কত নির্ঘুম রাত, কত আত্মত্যাগ থাকে তা যদি মানুষ জানতো তাহলে বোধ হয় পুলিশের চরম নিন্দুকও মনে হয় পুলিশকে একবারের জন্য হলেও একটা সালাম দিত।

তরুন মেধাবী কর্মকর্তারা যাদের অনেক কিছু হওয়ার যোগ্যতা ছিল তারা তা না হয়ে পুলিশ অফিসার হয়েছে। তারা যেভাবে Criminal intelligence analysis করে, খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ে জীবনের প্রথম প্রেমপত্র বা অরাধ্য সংগীর প্রথম অনলাইন চ্যাটিংও তারা এত আগ্রহ নিয়ে পড়েছে কিনা সন্দেহ আছে। যাহোক এ বিষয়ে লিখতে বসিনি। বসেছি ভয় নিয়ে লিখবো বলে।

আমার ইউনিট জঙ্গী দমনের স্পেশালাইজড ইউনিট, সেই অর্থে এপিডেমিক ল এন্ড অর্ডারের ফ্রন্টলাইনার নয়। কিন্তু কথায় আছেনা, নগরে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায়না। কাজেই করোনা কালে আমাদের অভিযান সীমিত হলেও ইন্টেলিজেন্স, ইনভেস্টিগেশন সহ নানা কাজ অব্যাহত আছে। অফিস করতে হয়, নিয়মিত বাইরে যেতে হয়, মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। আর ওভার অল পুলিশ রেসপনসিবিলিটি তো আছেই।

করোনা দুর্গত মানুষকে সহায়তা, সংক্রমন প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি নিজের ইউনিটের সদস্যদেরকে সংক্রমন মুক্ত রাখাও আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি ও সতর্কতা স্বত্বেয় আমাদের কয়েকজন সদস্য ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে একজন হল আমার সরকারী ড্রাইভার।

ড্রাইভার সম্ভবত ব্যারাক থেকেই বা অন্যকোন ভাবে সংক্রমিত হয়েছে। ওকে টেষ্ট করানোর পরামর্শ দিলাম। দুর্ভাগ্য জনকভাবে ওর রেজাল্ট পজিটিভ আসল। ওর চিকিৎসার ব্যবস্হা করলাম। ড্রাইভার সংক্রমিত হলে আমার সংক্রমিত হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারন প্রতিদিনই সে আমার সংস্পর্সে আসে।ড্রাইভার সংক্রমিত হওয়ার পর থেকেই আমার মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার আশংক দানা বাঁধতে শুরু করল। তা নিজের জীবনের জন্য না যতটা, তার চেয়েও বেশী পরিবারের সদস্য ও কলিগদের জন্য। করোনা হলেই যে মারা পড়ব এমন না। বরং এর চেয়ে অনেক বেশী রিস্ক নিয়েছি বা নিতে হয়েছে। শুধু আমার একার না অধিকাংশ পুলিশ অফিসারদের জন্যই একথা কম বেশী প্রযোজ্য।

আমার ছেলেটির বয়স ১০। সে এখনো বাবা-মা ছাড়া ঘুমাতে পারেনা। আমি আক্রান্ত হলে আমার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা আক্রান্ত হতে পারে, এটিই স্বাভাবিক। আক্রান্ত হলেই তাকে আইসোলেশনে যেতে হবে এটাই বিধান। ড্রাইভারের ব্যারাকে সংক্রমনের সংবাদপ্রাপ্তির সাথে সাথেই আমি নিজ ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের আইসোলেশনে চলে গেলাম। আমি এক রুমে, স্ত্রী আরেক রুমে এবং বাচ্চারা আরেক রুমে। দেখা গেল কেউই ঘুমাতে পারি না আশংকা বা দুশ্চিন্তায়। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবরা যাতে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না হন সেজন্য কারো সাথেই শেয়ার করিনি বিষয়টি। সারারাত যে যার রুমে জেগে থাকে বা ড্রয়িং/ডাইনিং মিলিয়ে দূরে দূরে বসে টিভি দেখে, সিনেমা দেখে এমন কি সিরিয়াল দেখে রাত পার করি। ভাগ্যিস রোজা ছিল। সেহরী, ফজরের নামাজ শেষে যে যার মত ঘুমাতে যাই।

অফিস যাই চোরের মত। অফিস খুলতে বলে সবাইকে সরতে বলি, তারপর অফিসে ঢুকে জরুরী কাজ সারি যত দ্রুত সম্ভব। তারপর চলে আসি। আমার বা পরিবারের কারো শরীরেই কোন লক্ষন নেই দেখে একটু আশ্বস্ত হই। হাসপাতালে ভর্তি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি তার কি অবস্থা। বলে” স্যার কোন অসুবিধা নেই। এসি রুমে থাকছি বলে মনে হয় গলা খুশ খুশ করে। এছাড়া আপেল, কমলা, সিভিট খাই-ভালই আছি”। ওর কথায় আরো বিভ্রান্ত হই। তার মানে লক্ষন না থাকা মানেই করোনা পজিটিভ না হবার নিশ্চয়তা নয়।

পরিচিত ডাক্তার বন্ধু বান্ধবদের সাথে কথা বলি। ওরা বলে সাবধানে থাক। তোরা ফোর্সের লোক, ইমিউনিটি বেশী অত সহজে কি তোদের লক্ষন বোঝা যাবে? চিন্তায় কাটতে থাকে দিনরাত। ছেলে বা মেয়ে দরজায় এতিমের মত দাঁড়িয়ে থাকে। কাছে আসতে চাইলে আমি বা ওদের মা নিষেধ করি। নিজ রুমেই আলাদা প্লেট, গ্লাসে খাই,অছ্যুতের মত থাকি সবাই যে যার রুমে।

টেনশনে বিনিদ্র রাত কাটতে থাকে। স্টাফদের তো আগেই ছুটি দিয়েছি। বাসায় এক খালা আমাদের সাথে আছে। তাকে নিয়েও চিন্তা হয়। আক্রান্ত হলে কে, কোথায় যাবো ভাবতে থাকি। হাসপাতালে আমাকে যেতে হলে তো অসুবিধা নাই, স্ত্রীকে যদি যেতে হয় বা দুজন কেই যদি যেতে হয় তো বাচ্চারা কার কাছে থাকবে ? আত্মীয়-স্বজন কেউ এসে তো এখন হাল ধরতে পারবে না। ভয়, দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক বাড়তে থাকে। করোনা ট্রেন্ড জানার জন্য খবর দেখি, পড়ি, ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে থাকি, পুলিশ হাসপাতালে খোঁজখবর রাখি। পুলিশ হাসপাতাল থেকে পরামর্শ দিল, টেস্ট করানোর। বাচ্চাদের মুখ শুকনা, কি না কি হয়। অবশেষে করিয়ে ফেললাম। স্যাম্পল দেয়া শেষে সময় আর কাটেনা। কখন পাবো রিপোর্ট। বলেছে রাত সাড়ে আটটায় জানাবে। বাসায় বললাম পরের দিন রেজাল্ট দিবে- যাতে ওদের চিন্তা আমার মত না হয়।

জীবনে কত কিছুর জন্য অপেক্ষা করেছি। বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট, এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েট এর রেজাল্ট, ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট, বিসিএসের রেজাল্ট, অারো কত অপেক্ষা!!

বাবা,মা, নিজের সন্তান হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা, দেশে বিদেশের হাসপাতালের বারান্দায় বা ওয়েটিং রুমে রাত ভোর অপেক্ষা, আইসিইউতে মৃত্যুপথযাত্রী সন্তান বা মায়ের জীবন সন্ধিক্ষনের অপেক্ষা, স্যাচুরেশন কত হল, বিপি কত? পালসের কি অবস্থা এগুলোতে ঘুরপাক খেয়েছি রাতের পর রাত। সে অভিজ্ঞতাও হয়েছে কতবার!

করোনা টেস্ট করাাতে দিয়ে মনে হল তেমনি একটা অপেক্ষার পালা শুরু হল। আটটার কিছু পর পুলিশ হাসপাতাল থেকে রেজাল্ট জানালো। আলহামদুলিল্লাহ নেগেটিভ।মনে হল আটকে থাকা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। মাঝখানের তিন চারটা দিন খুব অল্প সময়।বিপদ নাজের গায়ের উপর না আসা পর্যন্ত তার ভয়াবহতা বোঝা যায়না। এ ক’দিনে উপলব্ধি হয়েছে অনেক।

জীবনে সত্যিকারের ভীতিকর অবস্হায় পড়েছি অনেকবার।কয়েকটি আগে শেয়ার করেছি,এখনো করি দুয়েকটা।হাওয়াই জাহাজে প্যাসিফিক ওশান পাড়ি দেওয়ার সময় বৈরি আবহাওয়ায় পড়েছিলাম একবার, ২০০৭ সালে।ইন্টারপোলের মানবপাচার নিয়ে সম্মেলনে পেপার প্রেজেন্টেশনের জন্য নামিবিয়া যাচ্ছিলাম বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি হয়ে।আমি একা।সাউথ আফ্রিকা অঞ্চলে তার আগে আর যাইনি।ইন্টারপোলের সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি বক্তা হিসাবে পেপার প্রেজেন্টেশন আমার সেবারই প্রথম।কাজেই থ্রিল একটু অন্যরকম। আকাশযাত্রায় টারবুলেন্স স্বাভাবিক ঘটনা।আমি অনেকবারই পড়েছি। কিন্তু সেবারেরটা ছিল ভিন্নমাত্রার ভীতিকর।এতটাই যে সাধারন যাত্রী তো বটেই আমি এমনকি প্রশিক্ষিত ক্রুদেরকেও ভয়ে ওয়াকওয়াক করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে যেতে দেখেছি।সবমিলিয়ে এর স্হায়িত্ব ছিল মিনিট তিরিশের।

ক্যাপ্টেন বার বার কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলছিলেন টারবুলেন্সের কথা। অবশ্য বলার দরকার ছিলনা।এমিরেটসের বোয়িং ৭৩৭ বেশ বড় ও বনেদি জাহাজ। পেজা তুলার মত এদিক ওদিক হেলছিল দুলছিল। নীচে অতলান্ত মহাসাগর, দুপাশে ঝাকে ঝাকে তারা খসার মত বিদ্যুৎ চমকানি। লক্ষ কোটি নক্ষত্রের মেলায়,সাগরবক্ষকে নীচে রেখে সেদিন বুঝেছিলাম মানুষ জ্ঞানে বিজ্ঞানে যতই বড়াই করুক আসলে সে কতটা ক্ষুদ্র!!

প্রশিক্ষিত কেবিন ক্রুদের চেহারায়ও আতংকের সুস্পষ্ট ছাপ, ক্যাপ্টেনের অভিজ্ঞ গলার স্বরে কাঁপুনি, বিমানের অসহনীয় ঝাঁকুনি, আর বিভিন্ন ভাষার বয়সের নর-নারী, বৃদ্ধ, শিশুর চিৎকারে সেদিন বুঝেছিলাম মৃত্যুভয়ে ভীত মানুষ আসলে কতটা অসহায় প্রানী!!

আমার সিট ছিল জানালার ধারে। বুঝতে পারছিলাম যেকোন মুহুর্তে সলিল সমাধি হহতে পারে,মারা যেতে পারি এবং তা হতে পারে এমন মৃত্যু যে লাশ খুজে পাওয়া তো দূরের কথা বিমানটিও হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না। সাগর আমাকে ভীষন টানে। যতবারই সাগর পাড়ে যাই মনে হয় আর ফিরবোনা। সেদিন বুঝেছিলাম সাগরেই আমার অন্তিম শয্যা হতে চলেছে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার সে যাত্রায় আমি একা ছিলাম, গন্তব্য নামিবিয়া, দুবাই থেকে এমিরেটস এর ফ্লাইটে জোহানেসবার্গের যাত্রী।

অন্তিম মুহুর্তে স্ত্রী, সন্তান, মা ভাই বোন কারো সাথেই যোগাযোগের সুযোগ নেই। তখন মোবাইলে ক্যামেরার প্রচলনও খুব একটা কমন ছিলনা। কারো সাথে কথা বলার,বা শেষ মুহুর্তে কারো ছবি দেখে চোখের জল ফেলবো সে সুযোগও নাই।

কিছুক্ষন সবাইকে স্মরন করলাম। মনে মনে ওযু করলাম। আল্লাহ তায়ালার কাছে শেষ বারের নিয়তে ক্ষমা চাইলাম। দোয়া দরুদ যা জানি পড়তে শুরু করলাম। ভালভাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। আমি একা নই কয়েকশ যাত্রী। চোখের পানিতে সবাইকে স্মরন করলাম। কালিমা পড়া শুরু করলাম। বিমানের টার্বুলেন্স বাড়তেই থাকলো।চারিদিকে ত্রাহি চিৎকার। ক্রুরা প্রাণপণে ইমার্জেন্সি এক্সিট ইনস্ট্রাকশন দিয়ে চলেছে।কিন্তু কে শোনে কার কথা।

হঠাৎ বিমানটি বেশ মিনিট খানেকের একটা আকস্মিক বাক নিল বলে মনে হল। ভাবছিলাম চূড়ান্ত পতন আসন্ন। চোখ বন্ধ করে নিজের সন্তান, স্ত্রী, মায়ের ছবি দেখছিলাম কল্পনায়। ঠোঁটে ছিল কালিমা। কি আশ্চর্য্য কৃপা মহামহিমের। কিছুক্ষনেও কোন পতনের আভাস পেলাম না। বরং মনে হল ঝড়ের গতি কমে আসছে। সে স্মৃতিও কখনো কাউকে বলিনি -হঠাৎ করে যদি কেউ বিদেশ যাত্রায় দিব্যি দিয়ে বসে এই ভয়ে। অবশেষে আরো ৫/৭ মিনিটের মধ্যেই বিমানের গতি স্বাভাবিক হয়ে এল।আমরা বেঁচে গেলাম সে যাত্রায় ও।একমাত্র আল্লাহরই রহমতে।

খুশিতে এয়ার হোস্টেসরাও সবাইকে চা,কফি,পানীয়ের অফার দিলেন। মুষ্টিমেয় দুই একজন বাঙাল ছাড়া সবাই আবারো বোতলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সেদিন আমার একটা শিক্ষা হয়েছে। বাস্তব জীবনেও মনে হয় সে শিক্ষা কমবেশী সত্য।

করোনার প্রকোপ হয়তো একদিন শেষ হবে,সবকিছু স্বাভাবিক হবে।আমরা অনেকেই হয়তো ভাবছি জীবাণুরা ঘুমালে আমরা নিজেরা বা অন্যরা তাদের ভুল শুধরে নিয়ে, ভাল হয়ে যাবো,আমাদের বিবেক জেগে উঠবে।

আমার ধারনা তেমন কিছুই হবেনা। মানুষের তেমন কোন পরিবর্তন হবেনা। আমাদের অনেকের হৃদয়েই, বিশেষ করে যাদের কথায় যায় আসে তাদের হৃদয়ে মোহর আঁকা হয়ে গেছে, কোন পরিবর্তন হবেনা।
(আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে, সুরা ইয়া’সিন,আয়াত ৬৫)।

বিপদ চলে গেলে ভুলে যাবো। হয়তোবা ভবিষ্যতের কোন বিপদ এড়ানোর জন্য আবারো আল্লাহকে ডাকার নিয়ত করব।

মানুষ নানা কারনে নানাভাবে পথচ্যুত হয়। যুগে যুগে পথচ্যুত মানব জাতিকে পথে আনতে রাব্বুল আলামিন সতর্কতার জন্য নানা বালা মুসিবত দেন। এটা আমার কথা নয়। রাব্বুল আলামিন নিজেই এ কথা বলেছেন পবিত্র গ্রন্হ সমূহে। যুগে যুগে মানব জাতি তা প্রত্যক্ষ করেছে। মানুষ স্বভাবতই বিস্মৃতি পরায়ন। সে সব কিছু ভুলে যায়, ভুলে যাওয়াই তার স্বভাব।

করোনার কবলে বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ মারা গেছে। আরো লাখে লাখে হয়তো মারা যাবে। তার পর রাব্বুল আলামিন মানুষের মাধ্যমেই হয়তো তার প্রতিকার করবেন। করোনা চলে যাবে। ভবিষ্যতে অন্য কোন সময়ে অন্য কোন রূপে হয়তো আবারো আসবে। আবারো মানুষ কাঁদবে, রাব্বুল আলামিন দয়া করবেন। সমাধান ও হয়তো হবে। আবারও মানুষ ভুলে যাবে। তারপর একদিন ইশরাফিলের শিংগায় ফুঁক পড়বে। সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মানবজাতি অকৃতজ্ঞই রয়ে যাবে। রাব্বুল আলামিন এমনি কি আর বলেছেন ফাবিআইয়্যি আ-লা-ই রাব্বিকুমা-তুকায্যিবা-ন?এরপরও: তুমি তোমার রবের আর কোন কোন নেয়ামতে অস্বীকার করবে?

আমাদের রব আমাদেরকে সর্বদা তার মহিমা স্মরণ রাখার তৌফিক দিন,তাঁর এবং শুধুমাত্র তাঁরই কাছে আশ্রয় প্রার্থণার বোধোদয় করুক এ কামনা করি।

ছোট্ট এ জীবনে অনেকবারই মৃত্যুভয়ে পতিত হয়েছি,পরোয়ার দিগার আমার প্রতি প্রতিবারেই অপার করুনা বর্ষণ করেছেন,বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন,নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন।ভবিষ্যতেও কৌশল কিংবা অন্যের সাহায্য নয়,সেই মহামহিমের কাছেই আশ্রয় চাই,একমাত্র তাঁকেই সিজদা করি এবং বিপদ ও বিপর্যয়েও একমাত্র তাঁর দিকেই চেয়ে থাকবো। আমার রব আমাদের ঈমানকে দৃঢ়তা দিন।

লেখক:
অতিরিক্ত ডিআইজি
এন্টি টেরোরিজম ইউনিট
বাংলাদেশ পুলিশ

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।