ঢাকারবিবার , ১৭ মে ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আলাল বাহিনীর কাছে জিম্মি বহুজাতিক কোম্পানী ভেনকিস : শ্রমিক নিয়োগে কমিশন বানিজ্য

Tito
মে ১৭, ২০২০ ৮:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তাজাম্মূল হুসাইন, মণিরামপুর থেকে।।
যশোরের মণিরামপুরে বৃহৎ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদনকারি ‘ভেনকিস কোম্পানি’কে কেন্দ্র করে খেদাপাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে আলাল-জালাল-হাফিজ বাহিনীর সম্রাজ্য। এরা অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-সমর্থক বলে দাবি করেন। কোম্পানীতে শ্রমিক নিয়োগ, কমিশন বানিজ্য, মাদক সব কিছুই এ বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে চলে। এলাকায় জমা-জমি, টাকা-পয়সাসহ যে কোন বিষয়ে কেউ কারো সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে হাজির হয় এই বাহিনী। চলে শালিসের নামে অর্থ বাণিজ্য। কোন পক্ষ তাদের আইন না মানলে চলে এই বাহিনীর শারিরীক নির্যাতন, বাড়ির পথ আটকিয়ে রাখাসহ এক ঘরে রাখার নানা অপকৌশল প্রয়োগ করা হয়।
উপজেলার এ কোম্পানী কেন্দ্রীক খড়িঞ্চী, জালালপুর, রঘুনাথপুরসহ কয়েকটি গ্রামে এই বাহিনীর আইন প্রচলতি রয়েছে। এই বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে চাইনা গ্রামের অনেকেই। অনেকেই বছরের পর বছর রয়েছেন অবরুদ্ধ। সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে এসব চিত্র উঠে আসে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, উপজেলার খড়িঞ্চী মৃত আবুল দফাদারের ছেলে আলাল হোসেন ও তার সহোদর জালাল হোসেন এবং আলতাফ হোসেনের ছেলে হাফিজুর রহমানের নিয়ন্ত্রনে ৩০ থেকে ৪০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। এলাকায় কেউ সমস্যায় পড়লে আইনের আশ্রয় নেয়ার আগে এ বাহিনীর শরনাপন্ন হতে হয়। নাহলে নানা শর্তারোপ করে তাদেরকে এক ঘরে করে রাখা হয়।
জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে কোম্পানীতে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কমিশন বানিজ্য’র অভিযোগ রয়েছে হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। মেহেদী হাসান নামের এক শ্রমিক বলেন, তিনি হাফিজুরের মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানীতে ঢুকলেও দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় এখন তার চাকরী নেই। শ্রমিক লুৎফর রহমান, শরিফুল ইসলাম বলেন, তিন শিফটে ৭৫ জন শ্রমিক কাজ করে। বাকী ২৫ জন উৎপাদন শাখায় কর্মরত আছি। তারা মাল লোড-আনলোড করে টন প্রতি ২ টাকা দিতে হয় হাফিজুরকে।
২০১৫ সালে খড়িঞ্চী গ্রামের আব্দুল আলীর সাথে তার চাচাতো ভাই রুহুল আমিনের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ হলে আলাল-জালাল ও হাফিজ বাহিনী গিয়ে হাজির হয়। রাতারাতি বাপ-দাদার ৫০ বছরের চলাচলের পথ প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। পথ খুলে দেয়ার জন্য আব্দুল হকের কাছে লাখ টাকা দাবি করেন হাফিজুর রহমান। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল আব্দুল আলীসহ তার স্ত্রীকে বেদম মারপিট করে এ বাহিনী। পরে থানা পুলিশ করলে আরো নির্যাতন শুরু করে এ বাহিনী। নিজেরা বোমাবাজি করে আব্দুল আলীর নামে মামলা দিয়ে তাকে জেলহাজতও খাটিয়েছে এ বাহিনী। আব্দুল আলী বলেন, এক পর্যায় এলাকায় থাকা দায় হওয়ায় দুই ছেলে আমেরিকা চলে যায়। বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে রফিকুল ইসলাম রপুর মধ্যস্থায় হাফিজুর রহমানকে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু পথ খুল দেয়নি তারা। খোলার কথা বলতেই তেড়ে আসেন এ বাহিনী। কাই বাধ্য হয়ে গত ৫ মে ও ১৬ মে এ বাহিনীর কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দু’টি জিডি করা হয়েছে।
সত্যতা যাচাইয়ে রফিকুল ইসলাম রফু বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, রোজার মাসে মিথ্যা বলবো না, হাফিজুরকে ৩৭ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তারা আজও পথ দেয়নি।
বছর খানেক আগে খড়িঞ্চী গ্রামের মশিয়ার রহমানের সাথে চাচাতো ভাই ইজ্জতের জমি নিয়ে বিরোধ হলে হাজির হয় এ বাহিনী। মশিয়ার ও তার স্ত্রী নবিসনকে বেদম মারপিট করে। নবিসন তার দাঁতের পাটি দেকিয়ে বলেন, দেখুন আলাল তাকে কিভাবে মেরেছে। বুকের একটি পাজর এখনও ভাঙ্গা।
প্রবাসীর স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, কয়েকদিন আগে দেবরদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ হলে জালাল তার বাহিনী নিয়ে তাকে ও তার মেয়েকে বেদম মারপিট করে বাড়ি ঘিরে দেয়।এলাকার গৌতম ঘোষ বলেন, সাইকেলে দুধ নিয়ে যাবার পথে দেলোয়ার হোসেনের ছাগল সাইকেলের তলে পড়ে মারা যায়। ক্ষতিপূরন হিসেবে হাফিজুর ২ হাজার টাকা নিয়ে দেলোয়ারকে আর ফেরত দেয়নি।
অলোক ঘোষ বলেন, গ্রাম্য সমিতির টাকা নিয়ে গোলমাল হলে এ বাহিনী তাদের ৯ জনের টাকা নিয়ে নিলেও তার টাকা আজও দেয়নি। এ বাহিনীর হাত থেকে রেহায় পাননি খেদাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেন। তার পৈত্রিক ১২ জমি নিয়ে কায়েম গাজী ও বিল্লাল হোসেনের সাথে বিরোধ হয়।
কামাল হোসেন বলেন, ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি মাদক ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন এ বাহিনীকে নিয়ে তার জমিতে আসে।
এছাড়া বাহিনীর হাতে মারপিটের শিকার হয়েছেন লিয়ন, রবিউল ইসলাম, জেসমিনসহ অনেকেই। কিন্তদু অনেকেই তাদের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
অবশ্য এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি আলাল-জালাল ও হাফিজ। তাদের দাবি গ্রামে শান্তির জন্য তারা গ্রামে শালিস দরবার করেন। তবে, এখন থেকে আর করবেন না বলে জানান বাহিনী প্রধান আলাল।
স্থানীয় খেদাপাড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ খাইরুল ইসলাম বলেন, আলাল-জালাল ও হাফিজ এলাকায় শালিস-বিচার করেন। ইতোমধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।