ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২ জুলাই ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাইপ্রাসে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে শরণার্থীর সংখ্যা

Tito
জুলাই ২, ২০২০ ৬:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোস্তাইন বিল্লাহ, সাইপ্রাস থেকে।।
ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকায় ৯২৫১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি সমৃদ্ধশালী এবং বৈচিত্রময় প্রকৃতির দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাস।দেশটির সাধারন জনগণের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার, প্রবাসী অভিবাসী এবং শরণার্থীর বসবাস।এখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভিবাসী,এবং প্রবাসীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকলেও সম্প্রতি আশংখ্যাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে শরণার্থীর সংখ্যা,যা আয়তনে ছোট এ দেশটির জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

অভিবাসীঃঅভিবাসী সাধারণত এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে উন্নত জীবনযাত্রা বা কর্মসংস্থানের জন্য জায়গা বা স্থান পরিবর্তন করেন। তবে রাজনৈতিক অভিবাসন কিছুটা ভিন্ন প্রক্রিয়ার। কোনো ব্যক্তি যখন বিশেষ কোনো শাসনব্যবস্থা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য স্থান পরিবর্তন করে থাকেন। আবার, কোন ব্যক্তি বসবাসের জন্য নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে এক বছরের অধিক সময় থাকে তখন তাঁকে সাধারণত অভিবাসী বলা যায়। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কারণে অভিবাসী হতে পারেন। জব বা উন্নত জীবনের লক্ষে অনেকেই দেশত্যাগ করে থাকেন।আবার পড়াশোনার জন্য বা পারিবারিক প্রয়োজনেও অনেকে অভিবাসী হয়।
প্রবাসীঃ ভিন্নদেশে স্থায়ীভাবে যখন কোন ব্যক্তি বসবাস করার জন্য স্থান পরির্তন করে তখন তাকে সাধারণত প্রবাসী বলে হয়ে থাকে। সুতরাং অভিবাসী এবং প্রবাসী এই দুই প্রকারের মানুষ সাধারণত নিজের ইচ্ছাতেই নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে কর্মসংস্থান বা উন্নত জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ইচ্ছায় স্থায়ীভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

২৫শে জুন, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইউরোস্ট্যাট এর তথ্যানুযায়ী সাইপ্রাসে মোট জনসংখ্যার ১৮ % ভিন্ন দেশের নাগরিক।যা ইইউ সদস্য দেশসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান। এখানে বসবাস করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকগণ। উল্লেখযোগ্য দেশের তালিকায় রয়েছে, ইউকে, রাশিয়া, জর্জিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, মলদোভা, সিরিয়া, ইজিপ্ট, লেবানন, নেপাল, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, চীন, মায়ানমার, প্যালেস্টাইন, ঘানা, নাইজেরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইউক্রেন, কেনিয়াসহ অন্যান্য দেশসমূহ।

শরণার্থীঃ ২০২০ সালের ১৮ জুন প্রকাশিত ইউএনএইচসিআর-এর বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট অনুযায়ি ২০১৯ সালের শেষপর্যন্ত পৃথিবীব্যাপি কমপক্ষে ৭৯.৫ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। যার প্রায় ২৬ মিলিয়নেরমত শরণার্থী, যাদের অর্ধেকেরই বয়স ১৮ বছরের কম। এবং এছাড়াও লক্ষ লক্ষ মানুষ রয়েছে, যাদের জাতীয়তা অস্বীকার করা হয়েছে এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং চলাফেরার স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

জেনেভা কনভেনশন এর শরণার্থীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে :
সে সমস্ত ব্যক্তিকে শরণার্থী হিসাবে গণ্য করা হবে, যে তার জাতি, ধর্ম, নাগরিকত্ব, বিশেষ সম্প্রদায়ভূক্ত, অথবা রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে – নিপীড়নের আশঙ্কার সম্মুখীন এবং তার এই আশঙ্কার উত্তম সাক্ষ্য প্রমানের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং সেই কারণে সে যে দেশের নাগরিক তার বাইরে অবস্থান করছে , এবং নিজের দেশের নিরাপত্তা পাচ্ছে না, অথবা উক্ত নিপীড়নের আশঙ্কায় নিজের দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর আস্থাহীন অথবা তার কোনো নাগরিকত্ব না থাকার কারণে এবং পূর্বে যে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিল , সেই দেশে ফিরতে পারছে না, অথবা উক্ত নিপীড়নের আশংকার দরুন সেই দেশে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক |
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন বিষয়ক কেন্দ্রের শিক্ষক শার্লট টাইলরের মতে শরণার্থী বা উদ্বাস্তু হলো এমন কোনো ব্যক্তি যিনি যুদ্ধ, গণহত্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে দেশান্তরী হন। এটি সম্পূর্ণ অন্যরকম একটি পরিস্থিতি। যে মুহুর্তে আপনি কাউকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন, তখন নির্দিষ্ট কিছু অধিকারকেও স্বীকৃতি দিতে হবে আপনার। তারা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, যা তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

বিশ্বের সর্বত্র শরণার্থী বৃদ্ধির সাথে সাথে সাইপ্রাসের শরণার্থীর সংখ্যাও আশংখ্যাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইপ্রাসের অ্যাসাইলাম সার্ভিস এর তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালের পরিসখ্যানমতে, বছরের শুরুর দিকে ১৩১৭ টি আবেদন জমা করা হয় এবং শেষপর্যন্ত মোট ১৭১৭১ টিতে গিয়ে পৌছায়। বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে আবেদনগগুলো জমা পড়ে, এর মধ্যে সিরিয়ার রয়েছে ২৬০২ টি, জর্জিয়া ১৫৯৪ টি,ইন্ডিয়া ১৫০৮ টি, বাংলাদেশ ১২৭০ টি, পাকিস্তান ১১৮৭ টি, ক্যামেরুন ১১৮১ টি, ভিয়েতনাম ৫২৯ টি, ইজিপ্ট ৫০০ টি, নাইজেরিয়া ৩৮৬ টি, এবং শ্রীলংকার ৩৮৫ টি আবেদন রয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখানে প্রায় মোট জনসংখ্যার ৩.৮০ পার্সেন্ট শরনার্থী রয়েছে।প্রতিদিন এ সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে হুহু করে বেড়েই চলছে।সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোস নরিসের একটি বক্তব্য এমন ছিল, তিনি বলেছেন যে বর্তমান ইইউ এর মধ্যে সাইপ্রাসে মাথাপিছু সর্বাধিক সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী রয়েছে যা জনসংখ্যার প্রায় ৩.৮% পার্সেন্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মোট ৩০১৪১ জন শিক্ষার্থী আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিল, যা প্রকৃত শরণার্থীর জন্য মোটেও সুবিধাজনক নয়, তাই প্রকৃত শরণার্থী বাছাইয়ে জন্য আবেদন কারি সকলকে তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত আবাসিক সুবিধা দিয়ে, ৫০ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে। এবং যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবে না তাদের জন্য একটি চার্টার্ড বিমান রয়েছে ও ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও বেশি চার্টার্ড বিমানের ব্যবস্থা করা হবে, তাদেরকে স্বদেশে নিরাপদে পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য। মূলত সাইপ্রাসে শরণার্থী আবেদনকারীর প্রায় ৭৫ পার্সেন্ট প্রকৃত শরণার্থী নয়। বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা এবং ইউ দেশসমূহে প্রবেশ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। সম্প্রতি নর্থ সাইপ্রাস হয়ে সাউথ সাইপ্রাসে অবৈধভাবে অন্যদেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি এ সকল শরণার্থীর সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং প্রকৃত শরণার্থী না হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফলে কিছু অসাধু মানবপাচারকারীর মিথ্যা প্রলোভনীয় ফাঁদে নিঃস্ব হয়ে প্রতিনিয়ত সলীল সমাধী হচ্ছে হাজারও সপ্নের।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।