ঢাকাশুক্রবার , ৩ জুলাই ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনা ভাইরাসে নিরাপদ থাকতে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত

Tito
জুলাই ৩, ২০২০ ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ডা. মেহেদী হাসান ।।
ভিটামিন ডি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যা আমাদের শরীর জুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে।
বর্তমান দেশে তথা সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে মানুষ আতঙ্কিত। আর এই কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে নিরাপদ থাকতে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। ভিটামিন ডি খুব সহজেই আমরা গ্রহণ করতে পারি। শরীরে রোদ লাগলে আমাদের ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরি করে। সূর্যালোক, ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান আমাদের শরীরকে সবল রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ সংক্রমণ থেকে বাঁচায় – যা মহামারি পরিস্থিতিতে খুবই প্রয়োজনীয়। সুতারাং ভিটামিন ডি ঘাটতি স্বাস্থ্য সমস্যা অন্যতম গুরুতর। এনসিবিআই অনুসারে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ এই ভিটামিন ডি ঘাটতিতে ভোগে।

মার্কিন ইনস্টিটিউট অফ মেডিসিনের পরামর্শ অনুযায়ী, গড়ে দৈনিক ১০-২০ মাইক্রোগ্রামের ভিটামিন ডি খাওয়া প্রয়োজন আমাদের। আমাদের দাঁত, হাড় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফেট এবং অন্যান্য জৈব প্রভাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির শোষণের জন্য দায়ী। এছাড়াও সূর্যালোকে ভিটামিন ডি উৎপাদিত হয়। এটি এমন এক দ্রবণীয় ভিটামিন যা ভিটামিন ডি-1, ডি -2 এবং ডি -3 অন্তর্ভুক্ত করে। হাড় এবং দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য এবং রোগগুলির বিরুদ্ধে উন্নত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ভিটামিন ডি। তাছাড়া, এটি ওজন হ্রাস ত্বরান্বিত করতে, বিষণ্নতার লক্ষণগুলিকে হ্রাস করতে এবং শরীরের কার্যকারিতাকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি-এর অভাব আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিধ্বংসী ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে। ভিটামিন ডি’র অভাবে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হাড়ের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

তবে শরীরের ৮ লক্ষণ দেখে আপনি সহজে বুঝবেন আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব ঘটেছে। লক্ষণগুলি :
১। প্রায় অসুস্থ বা আক্রান্ত হওয়া: ভিটামিন ডি ইমিউন ফাংশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘাটতির অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হ’ল অসুস্থতা বা সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
২। ক্লান্তি ও অবসাদ : অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অবসাদ ভিটামিন ডি এর ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। পরিপূরক গ্রহণ শক্তির স্তর উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।
৩। হাড় এবং পিছনে ব্যথা: রক্তের কম পরিমাণে ভিটামিন ডি হাড়ের ব্যথা এবং নিম্ন পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে।
৪। বিষণ্ণতা: হতাশা ভিটামিন ডি স্তরের সাথে সম্পর্কিত এবং কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে পরিপূরক মেজাজের উন্নতি করতে পারেনা ভিটামিন ডি এর অভাবে।
৫। ক্ষত শুকাতে বাঁধা সৃষ্টি: ভিটামিন ডি’র অভাবে অনেক সময় অপারেশনের পর, কাটা ছেঁড়া বা ইনফেকশন হলে ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।
৬। হাড়ের ক্ষয়: লো হাড়ের খনিজ ঘনত্বের নির্ণয় ভিটামিন ডি এর ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই হাড়ের ভর সংরক্ষণের জন্য এই ভিটামিনের পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
৭। চুল ক্ষতি: চুল পড়া হ’ল মহিলা-প্যাটার্ন চুলের ক্ষতিতে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি বা অটোইমিউন কন্ডিশন অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটা হতে পারে।
৮. পেশী ব্যথা: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং ভিটামিন ডি এর নিম্ন রক্ত ​​মাত্রার মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে, যা ভিটামিন এবং ব্যথা-সংবেদনশীল স্নায়ু কোষগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়তার কারণে হতে পারে।

কিছু গবেষণায় ধারণা করা হয় যে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকলে সাধারণ সর্দিজ্বর ও ফ্লু’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। তাহলে কি প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি খাওয়া উচিত? উত্তরে বলবো মোটেও না। কারণ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট বা ট্যাবলেট খুবই নিরাপদ হলেও প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি হতে পারে। আসুন এখন দেখি কী পরামর্শ দিচ্ছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ? যুক্তরাজ্যে শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত) মানুষকে দিনে অন্তত ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করার উপদেশ দেয়া হয়। আর যদি যথেষ্ট সময় ধরে সূর্যালোকের সংস্পর্শে না আসা হয়, তাহলে সারা বছরই ১০ মাইক্রোগ্রাম করে ভিটামিন ডি খেতে বলা হয়।

আপনি যদি ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিতে চান : তাহলে
১-১০ বছরের শিশুদের দিনে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি নেয়া উচিত নয়। ১২ মাসের নিচে শিশুদের দিনে ২৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি নেয়া উচিত নয়। প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ১০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি নেয়া উচিত নয়। যাদের ভিটামিন ডি’র স্বল্পতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ডাক্তাররা অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে বলে থাকেন। আবার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে – যেমন কিডনির সমস্যা – নিরাপদে ভিটামিন ডি নেয়া যায় না।

এখন আমার প্রশ্ন ভিটামিন-ডি কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে?

আসলে ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে কেউ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবেন না, এমন কোন প্রমাণ নেই। তবে মনে করেন মহামারির সময় এই ভিটামিন নেয়ার আলাদা উপকারিতা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে মেডিসিনের ইমেরিটাস প্রফেসর জন রোডস বলেন, ভিটামিন ডি শরীরের অভ্যন্তরীণ জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়তা করে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অত্যন্ত অসুস্থ ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রদাহের কারণে ফুসফুসে বড় ধরণের ক্ষতি হয়, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর হতে পারে ভিটামিন ডি। তবে এই বিষয়ে আরো অনেক গবেষণা প্রয়োজন।

খাদ্যাভ্যাসে কি পরিবর্তন আনতে হবে?
ভারসাম্যপূর্ণ সুষম খাদ্য খেলেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর থাকে, আলাদা কোনো খাবার বা খাদ্য উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হঠাৎ উন্নতি সাধন করবে না। শুধু খাবার থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে। কেননা প্রতিদিন একজন মানুষের 400-800IU ভিটামিন ডি খাওয়া প্রয়োজন। তবে মাছ, ডিম, দইয়ের মত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে।

লেখক:
চিকিৎসক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।