ঢাকাশুক্রবার , ২৪ জুলাই ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাঘারপাড়ায় ৪০ দিনের কর্মসূচীর ৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করলেন ইউপি চেয়ারম্যান

Tito
জুলাই ২৪, ২০২০ ৯:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাঘারপাড়া প্রতিনিধি।।
প্রকল্প তদারকি কর্মকর্তার (ট্যাগ অফিসার) স্বাক্ষর জাল করে ৭ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে প্রকল্পের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। অতি দরিদ্র শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের এ টাকার অধিকাংশই চেয়ারম্যান লোপাট করেছেন। মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শতাধিক দরিদ্র শ্রমিক। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে (পিআইও অফিস) কর্মরতদের সহায়তায় স্বাক্ষর জালের ঘটনা ঘটেছে।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, গত বছরের ১৪ নভেম্বর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (প্রথম পর্যায়) আওতায় উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের প্রকল্পের নাম ও অতি দরিদ্র শ্রমিকদের তালিকা চাওয়া হয়। সে অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ পাঁচটি প্রকল্পের নাম ও ২শ ৩২ জন দরিদ্র শ্রমিকের (উপকারভোগী) তালিকা দাখিল করে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, নরসিংহপুর শাহাজানের বাড়ি হতে ফসিয়ারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার, উত্তরচাঁদপুর চৌরাস্তা হতে মফিজের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার, হলদা মাদ্রাসা হতে পিরতলা রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার, হিংগারপাড়া অরুজ বিশ্বাসের বাড়ি হতে মাজেদ ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার ও ছোটখুদড়া কওছারের বাড়ি হতে খুদড়া মাদ্রাসা পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার। এ পাঁচটি প্রকল্পে বরাদ্ধ দেওয়া হয় ১৮ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা।
অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ি ইউনিয়নওয়ারি শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য ব্যাংকের শাখা নির্বাচন করা হয়। এরপর ঐ ব্যাংকে প্রত্যেক শ্রমিকের দশ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। প্রতি কর্ম দিবসে এবজন শ্রমিক দুইশত টাকা হারে মজুরি পাবেন। এ টাকা থেকে ২৫ টাকা ব্যাংকে সঞ্চয় হিসাবে জমা থাকবে। প্রতি বৃহস্পতিবার শ্রমিক তার মজুরি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করবেন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শ্রমিকরা তাদের সঞ্চয়ের টাকা তুলবেন। জবকার্ডে মজুরি প্রদানের সকল তথ্য থাকবে। নিয়মানুযায়ি প্রকল্পের সভাপতি মাষ্টাররোল তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর করবেন। এরপর তিনি ট্যাগ অফিসার দিয়ে স্বাক্ষর করে পিআইও অফিসে জমা দিবেন। প্রকল্পের উপসহকারি প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষরের পর মাষ্টার রোল ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। এরপর শ্রমিকরা চেকের মাধ্যম ব্যাংকে তাদের হিসাব থেকে মজুরি উত্তোলন করবেন।
শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, ব্যাংক হিসাব তাদের নামে। মজুরির টাকা তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। অথচ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের চেক বই থাকে চেয়ারম্যানের কাছে। কাজ শুরুর আগেই চেয়ারম্যান চেক বইয়ের সকল পাতায় তাদের স্বাক্ষর বা টিপ সই নিয়েছেন। সপ্তাহ শেষে চেয়ারম্যান নিজে ও তার লোক দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। পরে তাদের নির্ধারিত টাকা থেকে কম টাকা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের মাষ্টার রোলে দেখাগেছে এ ইউনিয়নে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি।
রুপালি ব্যাংক খাজুরা শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জহুরপুর ইউনিয়নের ৪০ দিনের মধ্যে ৩৭ দিনের কাজ হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহের মাষ্টার রোলে ট্যাগ অফিসার বিআরডিবি কর্মকর্তা জুলফিক্কার আলীর স্বাক্ষর নিয়ে ব্যাংকে মাষ্টার রোল জমা হয়েছে। এরপর ১৫ কর্ম দিবসের ৬ শত ৭০ জন শ্রমিকের ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭ শত ৫০ টাকার মাষ্টার রোলে ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২ লক্ষ ৭ হাজার ২ শত ৫০ টাকা ও গত ২১ জুন ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫ শত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
প্রকল্পের ট্যাগ অফিসার জুলফিক্কার আলী গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাঘারপাড়া থেকে বদলি হয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ’আমি প্রথম পাঁচ সপ্তাহের বিলে স্বাক্ষর করেছি। বদলি হয়ে চলে আসায় আমি আর কোন বিলে স্বাক্ষর করিনি। পরের বিলে চেয়ারম্যান আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করেছেন।
খালিয়া গ্রামের শ্রমিক আব্দুল গণি বলেন, গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানের কথা বলে আমার চেকের সকল পাতায় টিপ সই নিয়ে নিয়েছে। আমি ২১ দিন কাজ করেছি। আমাকে দিয়েছে ১১ শত টাকা। বেতালপাড়া গ্রামের শ্রমিক শামিমা বলেন, কাজ শুরুর আগেই হাবিল নামে একজন চেয়ারম্যানের কথা বলে আমার চেকের সকল পাতায় টিপ সই নিয়ে নিয়েছে। ২৬ দিন কাজ করার পর আমাকে আর কাজ করতে দেওয়া হয়নি। আমার সব পাওনাও পরিশোধ করেনি।
গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন চেক বই জোগাড় করতে। চেয়ারম্যানের নির্দেশ মোতাবেক আমি এ কাজ করেছি।
নরসিংহপুর শাহাজানের বাড়ি হতে ফসিয়ারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য নাজিম আল কিরা জানান, ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর জাল করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ি বিল তোলা হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন, আরেক প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য রহিমা বেগম।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুন নাহার জানিয়েছেন, ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর নেওয়ার দায়িত্ব প্রকল্পের সভাপতির। স্বাক্ষর জাল হয়েছে কিনা আমি সঠিক জানি না।
জহুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মাদ দিলু পাটোয়ারি জানিয়েছেন, অভিযোগটি মিথ্যা। ট্যাগ অফিসার বদলি হওয়ার আগেই তাঁর কাছথেকে সকল মাষ্টার রোলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। চেক বই শ্রমিকদের কাছেই থাকে। তারা নিজেরাই তাদের মজুরি উত্তোলন করেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা র্নিবাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।