ঢাকাশুক্রবার , ১৪ আগস্ট ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শাস্তির নামে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ বন্দিকে পিটিয়ে হত্যা ! নিহতদের পরিবারের মামলা

Tito
আগস্ট ১৪, ২০২০ ৮:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্পেশাল করেসপনডেন্ট।।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। অভ্যন্তরীণ শাস্তির নামে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের মারধরে কিশোররা মারা গেছে। এ সময় আরও ১৪ জন আহত হয়। তবে ঘটনাটিকে প্রথমে বন্দি কিশোরদের দু’পক্ষের সংঘর্ষ হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। পরে একপক্ষের নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে শাস্তির নামে কিশোরদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মারধরের ঘটনা ঘটলেও সন্ধ্যায় লাশ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার কেন্দ্রের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শুক্রবার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, মারধরেই তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে অভ্যন্তরীণ শাস্তির রেওয়াজ আছে। সেটি করতে গিয়েই এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। মারা যাওয়া কিশোররা হল- বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)। নাঈম ধর্ষণ ও রাব্বি হত্যা মামলার আসামি ছিল।
নিহত রাব্বির বাবা খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়া শুক্রবার কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছে। তবে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
জানা গেছে, ৩ আগস্ট কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ওই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবার শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনসার সদস্যসহ কয়েকজন ১৮ কিশোরকে প্রচণ্ড মারধর করে। এতে তিন কিশোর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ফেলে রাখা হয়। অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে করে ফেলে রাখা হলেও পরে তারা বুঝতে পারেন কিশোররা মারা গেছে। এরপর সন্ধ্যার দিকে লাশগুলো হাসপাতালে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে চার দফায় আহতদের হাসপাতালে আনা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি কিশোররা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তারা জানায়, কেন্দ্রের আনসার সদস্য নূর ইসলাম কয়েকজন কিশোরের চুল কেটে দিতে চাইলে তারা রাজি হয়নি। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে তিনি অভিযোগ করেন ‘ওই কিশোররা নেশা করে।’ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন কিশোর তাকে মারধর করে। আহত কিশোরদের দাবি, ওই ঘটনার সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পালাক্রমে তাদের লাঠিসোটা ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। আহত কিশোর চুয়াডাঙ্গার পাভেল জানায়, কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানসহ অন্য স্যাররাও তাদের মারধর করেছেন। নোয়াখালীর জাবেদ হোসেন জানায়, জানালার গ্রিলের ভেতর আমাদের হাত ঢুকিয়ে বেঁধে এবং মুখের ভেতর কাপড় দিয়ে মারধর করা হয়েছে। কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়লে রুমের ভেতর বা বাইরে গাছতলায় ফেলে রাখা হয়। জ্ঞান ফিরলে একই কায়দায় আবার মারধর করা হয়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অমিয় দাস বলেন, দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি মরদেহ আসে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে। একজনের মাথায় ভারি কোনো বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। অন্যদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন শনাক্ত হয়নি। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক সাময়িক বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি : যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আবদুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রের তিন বন্দি নিহত ও ১৫ জন আহতের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শুক্রবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অপর দিকে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মাহমুদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানো হয়েছে, তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। এ ছাড়া সদস্য সচিব সমাজসেবা অধিদফতর যশোরের উপ-পরিচালক ও সদস্য জেলা পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, যিনি এএসপি পদমর্যাদার নিচে নন। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র- দুই কিশোর অপরাধীর লাশের অপেক্ষায় পরিবার : বগুড়া ব্যুরো জানায়, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিহত বগুড়ার কিশোর অপরাধী নাঈম হোসেন (১৭) ও রাসেল ওরফে সুজনের (১৮) লাশের অপেক্ষায় তাদের পরিবার। স্বজনদের মাঝে চলছে আহাজারি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সংঘর্ষ নয়; কেন্দ্র সংশ্লিলষ্টরা তাদের পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকালে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর অপরাধীদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়। এতে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন ও শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রাসেল ওরফে সুজনসহ তিনজন নিহত হয়। নাঈম শিবগঞ্জের দেউলী উচ্চবিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। ৩০ জানুয়ারি সে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও গলা কেটে হত্যা করে। নাঈমের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন। মা শান্তনা বেগম তার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
অপরদিকে রাসেল ওরফে সুজন ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর এক শিশুকে (১৩) অপহরণ ও ধর্ষণ করে। বিচারক তাকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলায় তার ২৫ বছরের জেল হয়েছে।
সুজনের মা সুবেদা বেগম দাবি করেছেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।