ঢাকাশনিবার , ২১ নভেম্বর ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রপ্তানী হচ্ছে মণিরামপুরের বড়ি : পৃষ্টপোষকতা পেলে ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় অর্থনীতিতে

Tito
নভেম্বর ২১, ২০২০ ১:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি।।
মণিরামপুর উপজেলার কয়েক’শ পরিবারের মহিলারা ‘বড়া’ তৈরী করে এক দিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অপরদিকে পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনায়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখে চলেছেন। এক সময় নিজেদের খাবার জন্য ও বাড়তি কিছু আয়ের উৎস হিসেবে তৈরি করা হলেও বর্তমানে তা বানিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরী করা হচ্ছে।
মণিরামপুর পৌর এলাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ ভাবে তৈরি করা বড়া এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারতে রফতানীর গন্ডি ছাড়িয়ে পৌছে গেছে ইউরোপ-আমেরিকাতেও। ভারতের বাজারে মণিরামপুরে তৈরী বড়ি‘র চাহিদার কথা সম্প্রতি বেশ প্রচার পেয়েছে। সরকারী পৃষ্টপোষকতা থাকলে এটিকে একটি শিল্পে রূপ দেয়া সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন।
কলাই, চালকুমড়া, কঁচু, পেঁপে, মুলাসহ নানা খাদ্য দ্রব্যের সংমিশ্রনে বিশেষ ভাবে তৈরী “বড়া’ যার স্থানীয় নাম ‘বড়ি’ এখন ভোজন প্রিয় বাঙ্গালীর অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্য তালিকার একটি। যে কারনে গ্রামীন জনগোষ্টির গন্ডি পেরিয়ে এখন শহুরে মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। মনিরামপুর পৌর এলাকার হাকোবা, জুড়ানপুর দাসপাড়া ও উপজেলার ভবানিপুর, দেবিদাসপুর, হরিদাসকাঠি, ঢাকুরিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক’শ পরিবারের মহিলারা তৈরি করেন এ বড়ি।
সরেজমিনে ওই সকল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহিলারা সূর্য্য ওঠার সাথে সাথে ‘বড়ি’ তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ওইসব এলাকার মহিলাদের পাশা-পাশি পরিবারে ছোট-বড় মেয়েরা, এমনকি পুরুষরাও নান্দনিক ভঙ্গিমায় ‘বড়ি’ তৈরীর কাজ করছেন। বানিজ্যিক ভিত্তিতে ‘বড়ি’ তৈরী করে মহিলারা নিজেরা যেমন স্বাবলম্ভী হচ্ছেন তেমনি পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনায়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাদের কারো সাথে কথা বলার এতটুকু ফুসরত নেই। তবুও কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তাদের সাথে।
পরিবারসহ ভোর বেলাতে বড়ি তৈরী কাজে ব্যস্ত হাকােবা গ্রামের শুভ কুন্ডুসহসহ অন্যান্য মহিলারা মণিরামপুর প্রতিদিনকে জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী ৭২-৭৩ সালের পর থেকে দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে তারা এ এলাকায় ‘বড়ি’ তৈরী করে আসছেন। শুরুতে যারা ‘বড়ি’ তৈরীর সাথে জড়িত ছিলেন আজ তারা অনেকেই জীবিত নেই। জীবিতদের মধ্যে একমাত্র বয়োবৃদ্ধা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তার বাবার বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। সেখানে অনেক আগে থেকেই ‘বড়ি’ তৈরী হতো। তারপর হাকোবা গ্রামে বধূ হয়ে আসার পর নিজের পরিবারের জন্য ‘বড়ি’ তৈরী করেন। এরপর কাকতলীয়ভাবে ফুলতলার অনেক মেয়েরই এ গ্রামে বিয়ে হয়। নিজেদের পরিবারের জন্য তৈরী ‘বড়ি’র স্বাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপকহারে ‘বড়ি’র চাহিদা বেড়ে যায়। মূলতঃ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বানিজ্যিক ভিত্তিতে ‘বড়ি’ তৈরী শুরু হয়।
‘বড়ি’ তৈরীতে ব্যস্ত কারিগররা আরো জানান, চাল কুমড়া, ঠাকুর কলই, কঁচু, পেঁপে, মাস কলাইয়ের সাথে প্রয়োজনমত পানি কিংবা এ ধরনের যে কোন খাদ্যদ্রব্য ঢেঁকি, যাতা বা মেশিনের সাহায্যে ভালভাবে বেঁটে হাত দিয়ে ভালভাবে ফেঁটিয়ে রৌদ্রের মধ্যে পাতলা কাপড়ের উপর নজর কাড়া এক বিশেষ কায়দায় হাতের কারুকার্যে ‘বড়ি’ দেয়া হয়। ‘বড়ি’ তৈরীর আগের দিন কলাই মেশিনে ভাঙ্গিয়ে খোসা উঠিয়ে ডাল বানিয়ে নরম করার জন্য তা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। ‘বড়ি’ তৈরীর জন্য মেঘমুক্ত আকাশ এবং পর্যাপ্ত রৌদ্র্র থাকা একান্ত প্রয়োজন। ‘বড়ি’ ভালভাবে শুকানো না পর্যন্ত রৌদ্রে রাখা হয়। শুকিয়ে গেলে কাপড় থেকে উঠিয়ে যে কোন তরকারীর সাথে দিয়ে রান্না করলে তা খাওয়ার মজাই আলাদা। এছাড়া ‘বড়ি’ তেলে ভেজে নিয়ে পেঁয়াজ, মরিচ, মসলা দিয়ে ভর্তা বানিয়ে গরম ভাতের সাথে খেতে অপূর্ব লাগে। রৌদ্রে ভালভাবে শুকানো ‘বড়ি’ বাজারজাত করা হয়। আগে থেকেই পাইকারী ক্রেতাদেরা নিকট থেকে বড়ি’র অর্ডার নেয়া হয়। তারপর হাত বদলের পর ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়।
এদিকে সম্প্রতি মণিরামপুরে তৈরী বড়ি এক শ্রেনীর ব্যবসায়ীরা কিনে ভারতে রপ্তানী করছে। এসব ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় এসে বড়ি প্রস্তুত কারকদের কাঁচামাল অগ্রিম কিনে দিয়ে বড়ি তৈরী করে তা ভারতের বাজারে রফতানী করে থাকে। এছাড়াও মণিরামপুরের বড়ি সম্প্রতিকালে ইউরোপ আমেরিকাতেও প্রবাসীদের চাহিদার মেটাতে রপ্তানি করা হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে বড়ির মান-ভেদে দু’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়ে থাকে। খরচ বাদে মাসে প্রতি পরিবার ৮/১০ হজার টাকা মুনাফা অর্জন করেন বলে তারা জানান।
মাশ কলাইয়ের ডাল, চাল কুমড়াসহ ‘বড়ি’ তৈরীর কঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে লাভের পরিমান কিছুটা কমে এসেছে বলে তারা জানান।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে এ শিল্পের প্রচার-প্রসার ঘটলে এবং বাংলাদেশের ‘বড়ি’ বিদেশে রপ্তানি হলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারে বলে ‘বড়ি’ তৈরীর পেশায় জড়িতদের দাবি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।