ঢাকাবুধবার , ৩১ মার্চ ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের বর্নাঢ্য জীবনী

Tito
মার্চ ৩১, ২০২১ ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মনিরুজ্জামান টিটো।।
মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সাহেব বাংলাদেশের অন্যতম রাজনীতিবিদ আলেম, শায়খুল হাদীস ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠিতা মুহতামিম। ৩ বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের হুইফ হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ’’বেফাকুল’’ মাদারিস আরবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির, কারা নির্যাতিত মজলুম জননেতা।
মুফতী ওয়াক্কাস এর জন্ম ১৯৪৮ইং সনের জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখ। বাংলা তারিখ ১লা মাঘ। তিনি ১৯৫৮ সনে প্রাইমারি শিক্ষা সমাপন করেন। ১৯৬৫ সনে দাখিল, ১৯৬৭ সনে আলিম এবং ১৯৬৯ সনে যশোর মনিরামপুর লাউড়ি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ফাজিল পাশ করেন। ১৯৭১ সনে তিনি মাদারিপুর শরীয়তীয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১ম শ্রেণিতে কামিল পাশ করেন। সেখানে তার বুখারী শরীফের শিক্ষক ছিলেন হযরত আল্লামা মুহিব্বুর রহমান সাহেব (রহ.)। তিনি আল্লামা জাকারিয়া (রহ.) এর বিখ্যাত শাগরিদ। তিনি মনিরামপুর কলেজে জেনারেল শিক্ষা লাভ করেন।
মণিরামপুর প্রতিদিনের বিশেষ তথ্য সংগ্রহে জানা যায়, তিনি তার উস্তাদ ও মুর্শিদের নির্দেশে ২য় বার হাদীসের টাইটেল ও ফতোয়া বিষয়ে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন। ১৯৭৪ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ২য় বার দাওরায়ে হাদিস, ১৯৭৫ সালে তাকমীলে দ্বীনিয়াত এবং ১৯৭৬ সালে ফেকাহ ও ফতোয়া বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা সমাপন করে সনদ লাভ করেন।
১৯৭৬ সালে দেশে ফিরে এসে প্রথমে যশোর মনিরামপুর লাউডি আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে খুলনা দারুল উলুম মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসিবে যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহিব্বুর রহমান (রহ:) এর ইন্তেকালের পর তিনি ঐ মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি যশোর মনিরামপুর মাদানীনগর জামেয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম, প্রধান মুফতী এবং শায়খুল হাদীস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা পূর্ব রামপুরা নতুনবাগ মাদ্রাসার তিনি শায়খুল হাদীস। ঢাকায় থাকলে তিনি সেখানে বুখারী শরীফের সবক পড়ান।
মুফতী ওয়াক্কাস ১৯৭৩ সনে শায়খুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ:) এর বিশেষ খলিফা ও তার উস্তাদ লাউডি আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল আল্লামা শায়খ তাজাম্মুল আলী জালালাবাদী (রহ:) এর হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন এবং ১৯৮৪ সালে চিস্তিয়া, কাদেরীয়া, নকশবন্দিয়া, সোহরাওয়ার্দীয়া তরিকায় খেলাফত লাভ করেন।
মুফতী ওয়াক্কাস ১৯৮৬ সালে এলাকার জনগনের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে যশোর-৫ মণিরামপুর থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অতঃপর ধর্ম মন্ত্রনালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রনায়য়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। মুফতী ওয়াক্কাস জাতীয় সংসদের হুইপ হিসিবে ও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৮ সনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২য় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ সনে চারদলীয় জোট মনোনিত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হিসিবে ৩য় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি, ধর্ম মন্ত্রনালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের হুইপ হিসিবে তিনি এলাকার উন্নয়ন ও দেশ জাতি ও ইসলামের খেদমত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান।
মুফতী ওয়াক্কাস তার পীর আল্লামা তাজাম্মুল আলী (রহ:) এর অনুমোদনক্রমে আল্লামা হাফেজ আবদুল করিম শায়কে কৌডিয়া, আল্লামা মুহিউদ্দীন খান, আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী, আল্লামা শওকত আলী (রহ:) প্রমুখের বিশেষ অনুরোধে ১৯৯১ সনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি জমিয়ত কে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন হিসিবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সুদীর্ঘ ২৫ বছর তিনি জেনারেল সেক্রেটারি হিসিবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ৭ই নভেম্বর ২০১৫ইং অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি জমিয়তের নির্বাহি সভাপতি নির্বাচিত হন। ১১ ই জানুয়ারি ২০১৮ ইং ঢাকা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হন।
মুফতী ওয়াক্কাস ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠিতা সদস্য, মহাসচিব, ও যুগ্নমহাসচিব হিসিবে ও দায়িত্ব পালন করেন। একজন দক্ষ ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজ সেবক, শায়খুল হাদীস, মুফতী ও মুহতামিম হিসিবে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত।
বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ৩১ মার্চ ২০২১ ভোর ৪.৩০মিনিটে রাজধানী ঢাকার মহাখালী শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দক্ষিণ বাংলার অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনিরামপুরের জামিয়া ইমদাদিয়া মাদানীনগর মাদরাসায় যানাজা নামাজ শেষে নিরনিদ্রায় শায়িত হলেন এই আলেমেদ্বীন।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।