ঢাকামঙ্গলবার , ৮ নভেম্বর ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মণিরামপুরের শীর্ষ ব্যবসায়ী রতন পালের স্ব-পরিবারে ভারত পাড়ি! কিন্তু কেন ?

Tito
নভেম্বর ৮, ২০২২ ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নূরুল হক।।
কয়েকদিন ধরে একটা বিষয় আকাশে-বাতাশে ভেসে বেড়াচ্ছে-মণিরামপুরের শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ী ও মণিরামপুর বণিক সমিতির সম্পাদক রতন পাল-স্বপরিবারে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। বলা যায় এই আলোচনাটাই মণিরামপুরে এখন ‘হটকেক’। কেউ কেউ বলছেন সব কিছু বিক্রি করে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য একেবারে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন তারা স্ব-পরিবারে ভারতে চিকিৎসা নিতে গেছেন। পক্ষে-বিপক্ষে এমনই আলোচনা মণিরামপুর পৌরশহর থেকে শুরু করে উপজেলার প্রত্যেকটি হাট-বাজার,গ্রাম-গঞ্জে এবং পাড়া মহল্লায়। তবে এরকম দেশত্যাগ শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই করেছেন বা করছেন তা কিন্তু নয়। অনেক মুসলিম পরিবারকে ইউরোপ, আমেরিকা বা এশিয়ার কয়েকটি দেশে স্বপরিবারে নাগরিকতা গ্রহন করে বসতি স্থাপন করেছে এমন প্রমাণ অহো রোহ রয়েছে। সেটা আমলা হোক, রাজনীতিবিদ হোক আর সাধারণ নাগরিক হোক। সেটা নিয়ে বেশি আলোচনা বা সমালোচনা খুব কমই হয়।
কিন্তু মনিরামপুরে রতন পাল ও তার পরিবারকে নিয়ে এত আলোচনা কেন? সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু এখন রতন পাল ও তার পরিবারকে নিয়ে। আর আলোচনা হবেই বা না কেন? তিনি ছিলেন মণিরামপুরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একজন নেতৃত্ব স্থানীয় শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ী। বলা যায় সুশীল সমাজের একজন। তাইতো আলোচনা হবে-এটা সাধারণ ব্যাপার। আমার মত ক্ষুদ্র চিন্তার সাধারণ একজন শিক্ষক বিষয়টা ভালভাবে অনুধাবণ করতে না পাররেও জ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন না, এটা কিন্তু সত্য না। এখন একটু পিছনের দিকে যদি যায়।
সেই ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্থান বিভক্তির পর থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দু) এ দেশ ত্যাগ মানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাওয়ার প্রবণতা কখনো বন্ধ হয়নি। যাওয়ার হার কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। কিছু গবেষণায় তার প্রমাণ ও বহু পরিসংখ্যানও আছে। বাংলাদেশ সরকারের যে পরিসংখ্যান তাতেও হিন্দুদের দেশ ত্যাগের প্রমাণ রয়েছে। ২০০১ সালের ও ২০১১ সালের শুমারির ১৫টি জেলার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছিল, ১০ বছরে প্রায় ৯ লাখ হিন্দু কমে গেছে। আর এই সংখ্যার অধিকাংশই চলে গেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। বাংলাদেশের পাশেই ভারতের মত একটি বিশাল হিন্দু প্রধান দেশ। সুতরাং সেখানেই-ই যাওয়ায় স্বাভাবিক। এছাড়াও ব্যবসা-বানিজ্য বা উন্নত জীবন-যাপনের জন্য অন্যান্য ধনী রাষ্ট্রেও অনেকেই বসতি স্থাপন করেছেন।
১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্থান বিভক্তি অথবা মুক্তিযুদ্ধের সমসাময়িক আগে-পিছে যারা চলে গেছেন-তাদের বিষয়টি অন্যভাবে নিলেও যুদ্ধ পরবর্তী দীর্ঘ সময় পরেও কেন তারা চলে যায়? বর্তমানেও কেন-ই যাচ্ছেন? এ প্রশ্নের সঠিক কোন সদুত্তর জানা থাকলেও কেউ দিতে চাইবে না। কেন দিবে না? সে ব্যাখ্যায় আমি যেতে চাই না। তবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু কথা না বললে তো হয় না। তাই আমার ক্ষুদ্র মাথায় যা বিচরণ করছে তার থেকে কিছুটা অন্তত: বলে ফেলি।
যাই হোক, যদি ধরেনি ভারতে চলেই গেছেন স্ব-পরিবারে ব্যবসায়ী রতন পাল। সেখানে গিয়ে আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করবেন। ওই যে কথায় বলে ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। কারণ তারা ব্যবসায়ী মানুষ। ব্যবসায়ের উন্নতির যাবতীয় কলাকৌশাল সব সময়ে তাদের দখলে। তারা বুঝে কিভাবে ব্যবসায়ে লাভবান হওয়া যায়।
কিন্তু তারপরেও কি কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে না? উত্তরটা হবে-অবশ্যই অনিচ্ছা সত্বেও কিছু প্রশ্ন এমনি-এমনিই চলে আসে। কারণ দীর্ঘদিন উপজেলার অন্যাতম শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ী রতন পাল ও তার পরিবার। বণিক সমিতির শীর্ষ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন অনেক বছর ধরে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্যবসায়ী মহলকে। তাছাড়া উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নেতৃত্বসহ সুধীজন বা সুশীল সমাজের একজন হিসেবে পরিচিত। মণিরামপুরে তাদের নাম-ডাক, খ্যাতির কমতি নেই। তাহলে কেন তারা এদেশ ছেড়ে চলে যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন একটু পিছনে ফিরে গিয়ে দেখি কোন কারণ খুজে পাওয়া যায় কি-না?
সেই ২০১৭ সালের ১ জুলাই শনিবার মণিরামপুর পৌরশহরের দোলখোলা কেন্দ্রীয় পূজা মন্দির সংলগ্ন নিজ বাসা-বাড়ীর সামনে রাত আনমানিক ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে রতন পালের ছোট ভাই ব্যবসায়ী পরিমল পাল (৪৫) কে কুপিয়ে আহত করে টাকার ব্যাগ ছিনতাই করে অজ্ঞাত ছিনতাইকারীরা। এদিন পৌরশহরের কুলটিয়া মোড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (মুদী দোকান) বন্ধ করে নিজেদের মাইক্রোবাসে বাসায় ফিরছিলেন পরিমল পাল। তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগে ছিল টাকা। পরিমলের সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই ভাই রতন পাল ও কার্তিক পাল ছিলেন। মাইক্রোবাসটি দোলখোলা মোড়ে বাড়ির সামনে পৌঁছালে তিন ভাই গাড়ি থেকে নামেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে দুই যুবক দৌড়ে এসে পরিমলের হাতে থাকা টাকার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি শুরু করে। বিষয়টি দেখে নৈশপ্রহরী আবুল হোসেন দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে পরিমলকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় এক যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে লক্ষ্য করে কোপ দেয়। কিন্তু কোপটি ব্যবসায়ী পরিমলের বুকে লাগে। এরপর দুর্বৃত্তরা পরিমলের পিঠে আরেকটি কোপ দিয়ে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তাঁরা বোমার বিস্ফোরণও ঘটায় বলে ওই নৈশপ্রহরী সেদিন জানিয়েছিলেন। পরে পরিমলকে উদ্ধার করে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তারপর যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর। কিন্তু সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত (আনুঃ) ২টার দিকে তিনি মারা যান।
ঘটনার রাতেই নিহতের বাড়ি ছুটে যান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্যসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, তৎকালিন উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক মেয়র অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, তৎকালিন বণিক সমিতির সভাপতি অরুণ কুমার নন্দন, সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা অ্যাড. মকবুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা হাবিবুর রহমান, অ্যাড. বশির আহম্মেদ খান, পৌর কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরুল, তৎকালিন কাউন্সিলর মফিজুর রহমান, গৌর ঘোষ, গোপাল মল্লিক, মোহাম্মদ আজিম, বাবুল আকতার, গীতা রানী কুন্ডু, পারভীন সুলতানা, শংকরী বিশ্বাস, বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে।
এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে পরেরদিন রোববার সকালে জরুরী সভা করে পৌরশহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ দ্রæত হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। তৎকালিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ আবু সরোয়ার ও সহকারি পুলিশ সুপার আবু নাসের নিহতের বাড়িতে যান এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।
তৎকালিন মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি সার্বিক) মোকাররম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল দুটি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকায় দ্রæত দুর্বৃত্তদের আটক করা সম্ভব হবে বলে দাবী করেন। কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামী করে মামলাও হয়। সেই নৈশপ্রহরীকে আটক করে। কিন্তু মামলার আসামী নিয়ে নানা প্রশ্ন চলে আসে। সেই মামলারও বা এখন কি অবস্থায় আছে-এটা জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
এখনও জীবিত আছেন নিহত পরিমল পালের বাবা আশি বয়োবৃদ্ধ মহাদেব চন্দ্র পাল। মহাদেব চন্দ্র পাল গভীর চিন্তায় ডুবে থাকেন আর মনে মনে ভাবেন, দূর্বৃত্তদের হাতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে ৫ বছর হয়ে গেছে। যে কোন সময়ে তিনি হয়তো অপর জগতে চলে যাবেন। যে সন্তান পরপারে চলে গেছেন-সেখানে সে ভাল থাকুক। কিন্তু তার আর যে সন্তানেরা বেঁচে আছে তারা কি নিরাপদে আছে? চোখের সামনে দূর্বৃৃত্তদের হাতে ভাইকে অসময়ে মৃত্যুর সাধ গ্রহণ করতে তারাও তো স্ব-চোখেই দেখেছে। কিছুই করতে পারেনি। প্রাণের ভাইকে বাঁচাতে পারেনি। এটা কি তাদের মনে এতটুকু দাগ কাটে না? ছেলে হত্যার বিচার হবে কি-না, সেটাও জানে না মহাদেব চন্দ্র পাল। ভাই হত্যাকারী সানাক্ত হবে কি-না সেটাও জানে না রতন পাল আর কার্তিক পাল। তাহলে তাদেরই বা নিরাপত্তা কোথায়?
তাহলে রতন পাল ও পরিবারের সদস্যরা কেন ভারতে চলে গেলো, আদৌ এ প্রশ্ন করা কি প্রাধান্য পাবে? অথবা ঠিক হবে?

Photo: Shakib

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।