ঢাকাশনিবার , ২৪ অক্টোবর ২০১৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মণিরামপুরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা

admin
অক্টোবর ২৪, ২০১৫ ৬:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মণিরামপুরের প্রতিবছরের মতো এবারও মশিহাটিতে বসেছে ‘জামাইহাট’। বহু বছর ধরে দুর্গোতসবের নবমী ও দশমী- এই দু’দিন ‘জামাইহাট’ উতসব পালন করেন মশিয়াহাটি এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাজার ও কলেজমাঠে এ উপলক্ষে করা হয় বিশাল আয়োজন। বসে জামাইমেলা বা জামাইহাট। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ফি-বছর নবমী ও দশমীর দিনে শ্বশুরের সম্মান রক্ষার্থে জামাইরা বিশাল সাইজের মাছ ও অনেক মিষ্টি কেনেন। সম্মান এই কারণে যে, অমুকের জামাই এবার এত বড় একটা মাছ কিনেছেন, মিষ্টিও নিয়েছেন কয়েক কেজি! কালের পরিক্রমায় মণিরামপুর উপজেলার ৯৬ গ্রামের (হিন্দু অধ্যুষিত পল্লী) শ’ শ’ জামাই আসেন শ্বশুরবাড়ি এই পুজোতে; অংশ নেন বড় সাইজের মাছ কেনার প্রতিযোগিতায়। নড়াইল থেকে এসেছেন বকুল কর্মকার। শ্বশুর দুলাল কর্মকার। গত দশ বছর ধরে তিনি নবমীর দিনে শ্বশুরালয়ে আসেন; কেনেন সাধ্য অনুযায়ী মাছ। এ বছর চার কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছেন দুই হাজার টাকা দিয়ে। তার আশা, এতে অখুশি হবেন না শ্বশুর। একই উপজেলার মনোহরপুর এলাকার অনিরুদ্ধ মন্ডল এসেছেন ৯৬ গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে। শ্বশুরের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনিরুদ্ধ হাসিমুখে জানান, ২৪শ’ টাকা দিয়ে একটি রুইমাছ কিনলেন। গত ২৫ বছর ধরে ‘জামাই হাট’-এ মাছ নিয়ে বসেন মিলন মণ্ডল। সাত বছর ধরে আসছেন কালীপদ দাস। সামনে নিয়ে বসে আছেন ছয় কেজি ওজনের একটি রুইমাছ। দাম হেঁকেছেন আট হাজার টাকা। সাত হাজার হলে বিক্রি করতে চান।মশিয়াহাটি এলাকার বিষ্ণপদ বিশ্বাসের কাছে রয়েছে নয় কেজি ৮০০গ্রাম ওজনের একটি কাতলা মাছ। আট হাজার টাকার নিচে বিক্রি ককরবেন না তিনি। তবে, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কোনো জামাই মাছটি কেনেননি। মশিয়াহাটিতে এবার দুর্গোতসবে মন্ডপ তৈরি করা হয়েছে বিশালাকারের। এখানে দেবী দুর্গা ও তার সন্তানরা ছাড়াও অবস্থান করছেন অন্যান্য দেব-দেবীরা। মোট ৩০১ একটি প্রতিমা রয়েছে এখানে। প্রতিমা দর্শনে প্রতিদিন সমবেত হচ্ছেন হাজারে হাজারে পুণ্যার্থী।পুজোকে সামনে রেখে মশিয়াহাটিতে বসেছে মেলা। বাজার, রাস্তা, কলেজমাঠজুড়ে পাঁচ শতাধিক স্টল। আনা হয়েছে নাগরদোলা। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেখানে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছেন রমণীরাও। পাঁচ টাকার বিনিময়ে দোলায় চড়ছেন তারা। বেশিরভাগ স্টলে রয়েছে মিষ্টি-মিঠাই; আছে কসমেটিক্সের পসরাও। কেউ কেউ বিক্রি করছেন চটপটি, ফুচকা, ছোলার ঘুগনি, হাওয়ায় মিঠাই। বিবাহিত মেয়েরা দোকানির কাছে বসে হাতে পরে নিচ্ছেন শাঁখা। পছন্দ অনুযায়ী ব্যাগ কিংবা পার্সও কিনছেন মেয়েরা। মেলায় বেশ কয়েকটি আসবাবপত্রের দোকান বসিয়েছেন দোকানিরা। পুজোর শুরু থেকে এখানে বিক্রি হচ্ছে মেহগনি কাঠের পালঙ্ক, শোকেস, ড্রেসিং টেবিল। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুলতানপুর এলাকার ইসমাইল হোসেন এবারই প্রথম এসেছেন জামাইহাটে।বেচাবিক্রি খারাপ না, জানান এই দুজনই। তবে, বেশি বিক্রি হচ্ছে পালঙ্ক। দাম পাঁচ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। শো-কেস বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ হাজার আর ড্রেসিং টেবিল ৪-৫ হাজার টাকায়।মশিয়াহাটি বাজার আঞ্চলিক পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৯২৪ সাল থেকেই আশপাশের ১৫-১৬ গ্রামের মানুষ মিলে এই জামাইহাট করে আসছেন। এ অঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হলো এই হাট।’তিনি জানান, ৯৬ গ্রামের ঐতিহ্য ‘জামাইহাট’ একদিকে যেমন জামাইদের জন্যে সম্মানের; অপরদিকে এটি শ্বশুরকুলের জন্যে গৌরবের। কেননা এই অঞ্চলে আলোচিত হয়, অমুকের জামাই এবার সবচেয়ে বড়মাছটি কিনেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই উতসবটি বংশপরম্পরায় চলতে থাকবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।