মনিরুজ্জামান টিটো ।।
আমাদের অজ্ঞতা, একঘেয়েমি, আইন না মানার প্রবনতার পাশাপাশি আতশবাজির উৎসব দেখতে সমাগমকান্ড যে কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে তা আমরা হয়তো এখনও কল্পনাতেও আনতে পারছি না। যত মানুষ না করোনার কবলে মরার ভয় রয়েছে, তার চেয়ে বহুলাংশে বেশী আর্থনৈতিক দৈন্যতায় মরার আশংশকা রয়েছে বাংলাদেশে।
সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সতর্কতা অবলম্বনের নানা উপায় ও পরামর্শ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। তেমনি বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক, কলামিষ্ট ও চিকিৎসক আব্দুন নূর তুষার তার ফেসবুক আইডিতে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছেন। যা খুবই গূরুত্বপূর্ন ও সময়োপযোগী। সেখান থেকে আংশিক তুলে ধরা হলো:
দ্রুত অবস্থার নিয়ন্ত্রন যদি না হয়…
দিনমজুর ও প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষ কাজ হারাবে। হোটেল রিসোর্ট খাবার দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। পাঠাও উবার বন্ধ হয়ে যাবে। ফেরিওয়ালারা ক্রেতা হারাবেন।হকাররা রাস্তার পাশে ব্যবসা করতে না পেরে সর্বস্বান্ত হবেন। এয়ারলাইন, বাস, ট্রেন, লঞ্চ যাত্রী পাবে না। বিয়ে শাদী বন্ধ হয়ে যাবে। পার্লার বন্ধ হবে। বিক্রি কমে যাবে সোনা রুপা শাড়ী জামা গয়নার। যারা লোন নিয়ে ব্যবসা করছিলেন, তারা কিস্তী শোধ করতে পারবেন না। বাড়ীভাড়া দিতে পারবেন না। ফ্ল্যাটের কিস্তী দেয়ার আগে ক্রেতা মরে গেলে রিয়াল এস্টেটও বন্ধ হবে। অর্থনীতি মেল্টডাউন করবে।
করনীয় কি?
ক. অবিলম্বে স্বাস্থ্যখাতে দৃষ্টি দিন । আন্ত মন্ত্রনালয় টাস্কফোর্স করে ও সিটিজেনস অ্যাকশন ফোরাম করে, তাদের মধ্যে কাজের সমন্বয় করেন। রাজনীতি না, সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে ভাবেন ও সেভাবে কাজ করেন।
খ. সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
গ. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন। বেদরকারী মিটিং মিছিল সব বন্ধ করেন। বিশেষ করে খোলা জায়গায় লোক জমায়েত।
ঘ. গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে পিপিই সরবরাহ করেন। কেনার ব্যবস্থাও করে দেন।
ঙ. গুজব ছড়ায় যখন প্রতিষ্ঠানের উপর মানুষ বিশ্বাস হারায়। তাই যারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছেন এমন ব্যক্তিদের দিয়ে প্রচারণামূলক ভিডিও/ অডিও, পডকাস্ট তৈরী করুন।
চ. প্রতিদিন বেহুদা এসএমএস না পাঠিয়ে এখন মানুষের করণীয় কি, সে বিষয়ে এসএমএস পাঠান।
ছ. সকল উপজেলায় র্যাপিড রেসপন্স টিম সংগঠন করেন।
জ. দ্রুত প্রশিক্ষন দিন। স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত করেন।
আর যদি সম্ভব হয়:
নির্দিষ্ট তারিখ থেকে ২১ দিনের জন্য পুরো বাংলাদেশ লকডাউন করে দেন। সব বন্ধ। রাস্তায় মানুষ থাকবে না। অনুমতিবিহীণ কোন কিছু থাকবে না। লকডাউন চলাকালে কি কি কাজ কিভাবে হবে সেটা পরে বিস্তারিত লিখবো।
মানুষ বাঁচাতে হবে।অর্থনীতি বাঁচাতে হবে। মানুষ করোনাতে যতো মরবে তার চেয়ে বেশী মরবে নিস্ব হয়ে। যদি না আমরা এখনি ব্যবস্থা না নেই।
জনতা মরে গেলে কার নেতা হবেন? কে শুনবে বক্তৃতা, কে দেখবে আপনাদের বিপিএল ক্রিকেট আর সালমান খানের নৃত্য?
রাজনীতিবিদ না, সেলেব্রিটি না, মোটিভেশনাল স্পিকার না, সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে ভাবেন ও সেভাবে কাজ করেন।
এখনো সময় আছে। থ্রেশোল্ড বা অভিঘাত বিন্দু পার হয়ে গেলে আর কোন কিছুতেই কাজ হবে না।