আব্দুল আলীম, মণিরামপুর ডেক্স।।
বাংলাদেশে সার্বিক প্রস্তুতি দুর্বল। অবশ্য, দ্রুত সিরিয়াস হলে প্রতিরোধ, চিকিৎসা, সচেতনতা সবই করা সম্ভব। এখানে লোকচুরি কিংবা কূটকৌশলের আশ্রয় না নিয়ে পরিস্থিতি সবাইকে নিয়ে সামাল দেয়া দরকার। গোপন রাখলে বিপদ কমবে না। সর্বস্তরে তওবা, ইস্তেগফার করতে হবে। অন্যায়, দুর্নীতি ও হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। এই মুসিবতকে উপলব্ধি না করে বড় বড় কথা, পাল্টা চ্যালেঞ্জ কিংবা ঈমান বিধ্বংসী ফালতু কথাবার্তা কমাতে হবে। দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে শেষ বিচারের দিন মহান আল্লাহর দরবারে জবাব দেয়ার চিন্তাটি এখনই তাজা করার মোক্ষম সময়। সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্যই হয়তো আল্লাহ এই বিপদটি আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যাদের হাতে দেশের সব টাকা জমা হয়েছে, তারা জনগণের সেবা করার এই সুযোগটি হেলায় হারাবেন না। জানা নেই, মৃত্যু কখন কাকে স্পর্শ করে। হালাল টাকা-পয়সা কুক্ষিগত করে না রেখে বিপন্ন মানুষের জন্য ব্যয় করতে হবে। নিজে একা খেলে হবে না। চারপাশের মানুষকে প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করতে হবে। মানবতার পরীক্ষার দেয়ার এটাই সুযোগ। সামনে রমজান। প্রস্তুতি নিতে হবে, আল্লাহর রহমত, নাজাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের। যদি করোনাভাইরাস বাংলাদেশে তার ভয়াল রূপ নিয়ে আল্লাহ না করুন, প্রকাশিত হয়, তাহলে লাখো মানুষের জীবনহানী, কোটি মানুষের ভয়াবহ কষ্টের আশঙ্কা আছে। এই ক্ষেত্রে দোয়া, কান্নাকাটি, নামাজ-বন্দেগি, তওবা এবং অধিক নেক আমলের বিকল্প নেই। লক্ষ করা গেছে যে, বিপদের এই সুযোগে নাস্তিক্যবাদী কিছু মানবভাইরাস তাদের ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম চালিয়েই যাচ্ছে। প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, সতর্কতা ইত্যাদির ওপর জোর না দিয়ে এবং বিনোদন, কেনাকাটা, অহেতুক জনসমাগম নিয়ে কথা না বলে এরা কেবল মসজিদ ও দোয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। লাশ দাফনের বদলে পুড়িয়ে ফেলার প্রস্তাব দিচ্ছে। সমস্যা গভীর হওয়ার আগেই জানাজা বন্ধের প্রস্তাব দিচ্ছে। এটি জনমনে দুঃখ ও ক্ষোভের সঞ্চার করছে। এসব উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার বন্ধ হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘মসজিদ বন্ধ হবে না, বরং অসুস্থ ব্যক্তিরা মসজিদে আসবেন না।’ মানুষ জীবনযাত্রা পুরো থেমে গেলে কিংবা আল্লাহ না করুন মহামারিতে সবকিছু অটো লকডাউন হয়ে গেলেও একজন মুসলমান বেঁচে থাকা পর্যন্ত আজান, নামাজ ও মসজিদ বন্ধের কথা ভাবা যায় না। সবকিছু খোলা রেখে শুধু মসজিদের দিকে আঙুল তোলা নিশ্চয়ই কোনো ভালো মানুষের কাজ নয়। জরুরি অবস্থার সব বিধানই শরিয়ত দিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে শরীয়তের আলোকে মসজিদে ব্যবস্থাপনাও চলবে। এ নিয়ে ধর্মহীন নাস্তিকদের অধিক মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
একটি কথা রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান এবং দেশ ও জাতির প্রতি ক্ষেত্রে যারা দায়িত্বশীল সবাইকে এখনই বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশ ধর্মবিশ্বাসী শান্তিপ্রিয় সাহসী মানুষের দেশ। যত বিপদই আসুক মানুষ আল্লাহমুখী হয়ে মসজিদে গিয়ে, দোয়া, দান-খয়রাত, নামাজ-বন্দেগির মাধ্যমে সমস্যা কাটিয়ে উঠার পথ বের করে। এ মনোভাবটি দায়িত্বশীলরা যত দ্রুত অনুধাবন করবেন ততই মঙ্গল। কৃত্রিম উপায়ে জনগণের মনোভাব বদলানো যাবে না। এই ধর্মপ্রাণ অনুভূতিটি সরকার যদি মূল্যায়ন না করে তাহলে এখানে উগ্রপন্থা নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করবে। এই জন্য ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় নেতৃত্ব তথা আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ এবং ধর্মীয় সামাজিক নেতৃত্বের সাথে রাষ্ট্র ও সরকারকে গভীর সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে। বিশেষ করে, এই বিপদের সময়টিতে মানুষের মনোভাব বিশ্লেষণ করে সঠিক দায়িত্ব পালন করার বিকল্প নেই। মানুষকে একথাটি বোঝাতে হবে, মহামারি যত না গজব, মানুষের বিশ্বাস ও আচরণের ফলে তা এর চেয়ে বেশি রহমত হিসেবেই প্রতিপন্ন হয়ে থাকে।