ঢাকামঙ্গলবার , ১৯ মে ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেশের রাজনৈতিক দল গুলোর একাল ও সেকাল

Tito
মে ১৯, ২০২০ ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ শাহ্ জালাল, ঢাকা থেকে।।
আমি রাজনীতি করিনি বা রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এটা বললে সেটা হবে মহা মিথ্যা কথা। দেশে নিরোপক্ষ অরাজনৈতিক লোক পাওয়াও বেশ কঠিন। আসলে আমরা কোননাকোন ভাবেই কোননাকোন রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে রাজনৈতিক দল কী এবং রাজনৈতিক নেতাদের কী কাজ, তা দেখে আসছে এ দেশের মানুষ বহু বছর থেকে। জীবনে আমি কোনো দলের কার্যালয়ে খুব কমই গিয়েছি এটা বললে ভুল হবে আজ। গেলেও গিয়েছি কোনো নেতার সঙ্গে দেখা করতে। তবে কয়েকটি দলের কর্মকাণ্ড দেখে আসছি ছোটবেলা থেকে। বড় নেতাদের কর্মকাণ্ড দেখেছি কাছে থেকে। যে দলকে আমি সমর্থন করেছি তার নাম প্রকাশ করা মুখ্য বিষয় না। অনেক গণতান্ত্রিক দলগুলোর জনসভায়ও উপস্থিত থেকেছি।
চিরকাল কোনো কিছু একই রকম থাকবে, তা আশা করা ঠিক নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। পোশাক-আশাকে পরিবর্তন আসে। চালচলনে পরিবর্তন আসে। আজ থেকে প্রায় ২০-২২ বছর আগে এ দেশের নেতারা সাধারণত লম্বা সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরত। কালের পরিবর্তে এখন টাই সুট শার্ট পরে।
তবে ইতিহাস কি বলছে আসুন একটু জেনে আসি।আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে ধড়িবাজ-বাটপার ধরনের লোকের রাজনীতিতে স্থান ছিল না। সেখানে রাজনীতিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, দলের আলিশান কার্যালয় নয়। তখন ‘আসল’ দলের লোকেরা নকল দলের অফিস দখল করতে ট্রাক নিয়ে দিগ্বিজয়ী বীর আলেকজান্ডারের মতো অভিযানে বের হতেন না। তারপর ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, মারপিট ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ। দাউ দাউ করে জ্বলছে ট্রাক আর তার সওয়ারিরা ভোঁ-দৌড় দিতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে ভাঙছেন হাঁটু।
রাজনীতি আর মন্ত্রিত্ব, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, সংসদে বিরোধী দলের নেতৃত্ব সবই একসঙ্গে ককটেল বানানো শুধু কলিযুগেই সম্ভব। ধারণা করা যায় কি কোনো দেশে বিরোধী দলের কোন্দল মেটাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে? মন্ত্রিত্ব বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা না নিয়ে বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন দিলে তা হতো সততা। ব্যক্তিস্বার্থে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করার নাম রাজনীতি নয় এবং জনগণকে ছাগল মনে করা ঘোরতর অন্যায়। কামরুল হাসানের জীবনের শেষ ছবিটির কথা মনে পড়ে, যার ক্যাপশন: দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার কবলে। কী অমোঘ সত্য কথা বলেছেন নেতা: ‘আওয়ামী লীগ তার প্রয়োজনেই জাপাকে শক্তিশালী করবে।’
একজনের ১০টি বছর মন্ত্রিত্ব করেও সাধ মেটেনি। এখন আবার সরকারি দলে যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাঁড়া। শুধু হাতছানির হাতটা নড়তে দেখলেই হয়। আগে নেতাদের দেখেছি দল শক্তিশালী করাকে মন্ত্রিত্বের চেয়ে সম্মানজনক মনে করতেন। ১৯৫৭-তে শেখ মুজিব মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়াই বড় দায়িত্ব মনে করেছেন। আপনাদের মনে আছে, ১৯৭৪-এ এ এইচ এম কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর জায়গায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও পানিসম্পদমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাককে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে এখন বিরোধী দলের পরিচয় দিয়ে মন্ত্রিত্ব কামড়ে পড়ে থাকা নির্লজ্জতা নয় কি?
বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দুটোরই জন্ম ক্ষমতাসীন অবস্থায়। তাই সরকারের বাইরে থেকে যে রাজনীতি হয়, তা মানতে তারা বাধ্য নয়। কোনো দলের জাতীয় কাউন্সিল অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাতে পূর্ববর্তী বছরগুলোর নেতাদের কাজের মূল্যায়ন হয় এবং আগামী বছরগুলোতে নতুন নেতৃত্ব কী করবেন, তা ঠিক করা হয়। দল যদি প্রাইভেট কোম্পানিতে পরিণত হয় তাহলে এক কাউন্সিল থেকে আরেক কাউন্সিল থোড় বড়ি খাড়া—খাড়া বড়ি থোড় মাত্র।
বিএনপি যদি ডান্ডি ডাইংয়ের আর একটি ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে, তাহলে কাউন্সিল করেও লাভ নেই, বরং দল ক্ষমতায় গিয়ে করলেই ভালো। ইতিহাস যেটা বলে বিএনপির কোনো মহাসচিবই স্বাধীনমতো কাজ করা শুধু নয়, পুরো মেয়াদ পার করতে পারেননি। হয় পরপারে গেছেন, নয়তো পদ থেকে হয়েছেন বরখাস্ত। মান্নান ভূঁইয়ার প্রতি খালেদা জিয়া ভদ্রজনোচিত আচরণ করেননি। কে এম ওবায়দুর রহমান ভালো নেতা ছিলেন। এক রাত আগেও জানতেন না যে তিনি পদ হারাচ্ছেন। দলের সেক্রেটারি বানাতে হয় তরুণ ও দক্ষ নেতাকে। বুড়োরা ইমামতি করতে পারেন, দলের নেতৃত্ব নয়। মির্জা আলমগীরের মতো একজন অসাম্প্রদায়িক ভদ্র ও প্রগতিশীল নেতাকে শুধু ভারই বহন করতে হলো।
তবু আশা করি, এদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন। বাংলাদেশের পথভ্রষ্ট রাজনীতি তার অতীত ঐতিহ্য থেকে শিক্ষা নেবে এবং এ বছর স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এসে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি দেবে মানুষেকে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।