ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৬ মার্চ ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট নাগরিক হিসেবে শাহ জালালের খোলা চিঠি

Tito
মার্চ ২৬, ২০২০ ৪:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শাহ জালাল, ঢাকা থেকে।।
প্রিয় মনিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, আজ এই কঠিন দুর্দিনে একমাত্র আপনি জনপ্রতিনিধি হিসাবে মনিরামপুরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছন এজন্য মনিরামপুরবাসী চিরকৃতজ্ঞ। আপনি নিশ্চয় অবগত বর্তমান কোভিড-১৯ ভাইরাস অতি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তা বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে করোনা সংক্রমণের যে চারটি স্তরের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে, অর্থাৎ দেশের ভেতরেই এই রোগ কমিউনিটি সংক্রমণের পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চতুর্থ স্তরটি হল, ব্যাপক সংক্রমণ এবং ব্যাপক মৃত্যু।
চীন, ইরান, ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি থেকে আমরা পরিষ্কার ধারণা করতে পারি যে, কীভাবে অতি দ্রুত জ্যামিতিক হারে এই মহামারী দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। উপদ্রুত দেশগুলো থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসী ভাইবোনদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণে মনিরামপুরেও কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হলেও এই পর্যন্ত প্রবাস থেকে মনিরামপুর এসেছেন ১২০৬ জন। তবে এখনও মনিরামপুর করোনাভাইরাসে কোন মৃত্যুর সংবাদ না পাওয়া গেলেও প্রবাস থেকে আগত ব্যক্তিদের বিভিন্ন ভয়ভিতি ও জরিমানার মধ্য দিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রাখা গেছে মাত্র ১২৬ জন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর থানা মনিরামপুর, এই জনপদে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের বসবাস। বলা যায় ঘনবসতি এলাকা। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সময়মতো সঠিক উদ্যোগ না নিলে মনিরামপুরের মানুষ প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে পড়বে। মহাবিপদ মোকাবেলায় প্রস্তুতি, সমন্বয় ও আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের পর্যাপ্ত উপকরণ না থাকলে বিপদ বাড়বে। এখনই বাজারে নেই যথেষ্ট মাস্ক, স্যানিটাইজার ও অন্যান্য উপকরণ। এ বৈশ্বিক ভয়ংকর মহামারীর সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালের বিরাজমান দুর্বলতা অনুধাবন করে মনিরামপুরের নাগরিক হিসেবে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
জাতির মহাবিপদের এ মুহূতে দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ তো দূরের কথা মনিরামপুর কোন জনপ্রতিনিধি ভালো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তবে কিছু ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন ছাত্র যুব সংগঠন এগিয়ে আসছে। এই সব স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি ও সংগঠনের দায়িত্বশীল কাজগুলোকেও সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। এত বড় মাপের একটি মহামারী সামাল দেয়ার জন্য সঠিক ও সমন্বিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা পাশাপাশি একত্রে কাজ করা অপরিহার্য।
মনিরামপুরের উদ্বিগ্ন নাগরিক হিসেবে আপনার প্রতি দাবি জানাচ্ছি :

১. আজ সরকার ঘষিত লক ডাউনের প্রথম দিন ছিল। মনিরামপুরের অধিকাংশ মানুষ দিন মুজুর তাদের এই দুর্দিনে খাদ্য নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করার আহবান রইল।

২. মনিরামপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা কবে দোকান গুলোতে মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান নিশ্চিত রাখতে হবে। প্রয়োজনে সুযোগ হলে গরীব মানুষের জন্য ফ্রি ব্যবস্তা করতে পারলে ভালো হয়।

৩. মাছ বাজার কাঁচা বাজারের প্রবেশ পথে সতর্ক নজরদারির আওতায় নিয়ে ফাইয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জীবাণু নাশক ঔষধ স্প্রে করা।

৪. প্রবাসীদের সাথে ভালো আচারণের মাধ্যমে তাদের বাড়িতে প্রতিদিন নজরদারিতে রাখার জন্য বিশেষ টিম তৈরি করতে হবে। তাদের কে প্রতিদিন বাড়ির আশে পাশে জীবাণু নাশক ঔষধ স্প্রে করার নির্দেশ দিতে হবে।

৫. অতি দ্রুত মনিরামপুর হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স চিকিৎসাকর্মীসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপদ পোশাক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ কিছু সরবরাহ করা হয়েছে আরো মজুত করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। যাতে করে সামান্য সর্দি, কাশি ও জ্বর হলে রুগিরা চিকিৎসা পান।

৭.মনিরামপুর সবসময় বাজার মনিটরিং করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুদদারি বন্ধ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. মনিরামপুরের বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী, ধর্মীয় নেতাদের সাহায্যে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ক্লাব, সংগঠন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করে তাদের প্রচার ও রোগ প্রতিরোধে কাজের সুযোগ দিতে হবে।

১০. এর পাশাপাশি সামনে বর্ষার মৌসুম তাই ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়া মোকাবেলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বর্ষা আসার আগেই আমাদের ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যু রোধ করার প্রস্তুতিও শেষ করতে হবে। কারণ এই করোনাভাইরাস মহামারি কতদিন থাকে বলা যায় না।
আমি নিজেও জানি একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতার পরিসীমা। তার পরেও আপনাকে জানাচ্ছি এই জন্য যে, ইতিমধ্যে আপনি আপনার জনকল্যাণ মূলক কাজ সমগ্র মনিরামপুর বাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টাকরে চলেছেন। আজ দেশের মানুষের এই মহা দুর্দিনে আপনি মনিরামপুরের একমাত্র আশ্রয়। বাকিরা কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন কোন অন্ধকারে। পরিশেষে বলতে চাই আজ যারা মনিরামপুরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছন আপনি সহ প্রশাসন, ডাক্তার, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও আমার প্রিয় কলম যোদ্ধা সাংবাদিক বন্ধু সকলের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা।

লেখক:
মোঃ শাহ্ জালাল.
(কবি, সাংবাদিক, কলামিষ্ট)

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।